ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনের ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদী তীরবর্তী অন্তত ১১টি গ্রাম। কয়েক বছরের ভাঙনের ফলে অনেকেই ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কাজেও আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যও নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলা কাজের অগ্রগতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর প্রবল ভাঙন চলছে কয়েক দশক ধরে। প্রতি বছরই শত শত কৃষিজমি ও ঘর-বাড়ি গ্রাস করছে মেঘনা। গত কয়েক বছর নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, সোনাবালুয়া, মানিকনগর, চিত্রি, চরলাপাং ও কেদারখোলাসহ অন্তত ১১টি গ্রামের অনেক ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত এ ভাঙনের কারণে আরও কয়েকটি গ্রাম বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর ও সোনাবালুয়া গ্রামের নদীর তীরবর্তী এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

বড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা নিপা বেগম জানান, তার স্বামী মনির মিয়া মাটি কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। মেঘনা নদীর তীরে তাদের বাড়ি ছিল। এক মাস আগে নদীগর্ভে তাদের ঘর বিলীন হয়ে যায়। আদের আর কোনো জায়গা না থাকায় তারা এখন অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন।

বানেসা বেগম নামে আরেক নারী জানান, প্রতিদিনই নদী ভাঙছে। এতে করে ঘর-বাড়ি সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙন নিয়ে সার্বক্ষণিক তাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে কিছু দিনের মধ্যে তার ঘরটিও বিলীন হয়ে যাবে।

আক্কাস মিয়া নামে ক্ষতিগ্রস্ত আরেকজন বলেন, আমার কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাড়ি-ঘরও বিলীন হওয়ার পথে। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে ভিটেমাটি সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের নদীপাড়ের মানুষগুলোর আর কোনো সম্পত্তি নেই। এখনই নদীভাঙন ঠেকানো না গেলে আমাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না।

নদীভাঙন ঠেকানোর জন্য বড়িকান্দি, নূরজাহানপুর, সোনাবালুয়া ও ধরাভাঙ্গা গ্রামের ভাঙনকবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিওব্যাগ ও ব্লক বসানোর কাজ চলছে ধীর গতিতে। ভাঙনরোধে তিনটি প্যাকেজে হওয়া জিওব্যাগ ও ব্লক বসানোর কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন ও এম.এ. জাহের জয়েন্ট ভ্যাঞ্চার। গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুন মাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি কেবল ১৩ শতাংশ। ফলে কাজের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ভাঙনরোধকল্পে চলমান কাজের ধীরগতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ এবং মর্মাহত। এ বছর ভাঙন ঠেকাতে না পারলে আরও অনেক ঘর-বাড়ি ও কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে নদী তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো অনেক কষ্ট করছেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কি না সেটি দেখার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে’।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চলের (কুমিল্লা) প্রধান প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কাজে ধীরগতির কারণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দুইটি প্যাকজের সবকটি জিওব্যাগ এবং কিছু ব্লক বানানো হয়ে গেছে। বাকি ব্লকগুলো বানিয়ে ফেলতে পারলে দুটি প্যাকেজের কাজ অন্তত এই ঠিকাদারকে দিয়ে করানো যাবে। প্রয়োজনে অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে আরেকটি প্যাকেজের কাজ করানো হবে’।

এসপি