শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রিমু

অসুস্থ হওয়ার পর দীর্ঘ দিন ধরে বিনা চিকিৎসায় বিছানায় দিন কাটানো এবং জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রিমু আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজি মো. আব্দুর রহমান।

সোমবার (২৪ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসক অসহায় শিশু রিমু আক্তারের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে শিশুটিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমানের সঙ্গে সন্ধ্যায় কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রিমুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) চিকিৎসকরা তার পরীক্ষানিরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করবেন।

তিনি বলেন, রিমুর সঙ্গে তার মা হাফিজা আক্তার ও পথশিশু সেবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি খায়রুল ইসলামসহ অন্যরা রয়েছেন। আমরা তার সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছি।

এর আগে গত রোববার দুপুরে পথশিশু সেবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি খায়রুল ইসলাম অসুস্থ রিমুর মা হাফিজা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালে তিনি চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং হাফিজা আক্তারের হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন।

পথশিশু সেবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি খায়রুল ইসলাম বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে আমরা রিমুকে ঢাকায় এনে ভর্তি করেছি। ডিসি স্যার এ বিষয়ে সার্বিক খবর রাখছেন।

রিমুর মা হাফিজা আক্তার বলেন, ‘রিমুরে ঢাহা হাসপাতালে আইজ বিহালে ভর্তি করছি। ডিসি স্যার সব ব্যবস্থা কইরা দিছেন। অহন আমার শান্তি লাগতাছে। আমি দোয়া করি আল্লায় ডিসি স্যারের ভালা করুক।’

জানা যায়, তিন বছর পূর্বে ফচিকা গ্রামের সিএনজিচালক তারেক মিয়ার মেয়ে রিমু আক্তার বারহাট্টা উপজেলার পাটলী গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে খেলাধুলা করার সময় এক শিশু পাথরের টুকরো দিয়ে তার কপালে ঢিল মারলে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু তারেক মিয়া রিমু আক্তার, তার মা হাফিজা আক্তার, দাদি সাবেদা আক্তার ও ভাই তৌহিদকে রেখে অন্য একটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়।

পরে রিমু মা ও দাদি মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায় রিমুর চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না। এলাকার লোকজনের সহায়তায় আহত রিমুকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই রিমুর কপালে পাথরের আঘাত লাগা স্থান থেকে বিন্দু বিন্দু কিছু মাংসের গুটি বের হয়ে ভরে যায়।

এ অবস্থায় রিমুর হতদরিদ্র পরিবার এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে প্রথমে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া শেষে একপর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরে সেখানে অপারেশনের মাধ্যমে রিমুর কপালের অতিরিক্ত মাংস অপসারণ করা হয়। এরপর ভালোই চলছিল শিশু রিমুর দিন। এভাবে বছরখানেক অতিবাহিত হওয়ার পর আবারো তার কপালজুড়ে অতিরিক্ত গুটি গুটি মাংস বৃদ্ধি পেতে থাকে।

অর্থের অভাবে পরিবারটি দীর্ঘ দিন ধরে শিশুটির চিকিৎসা করাতে না পারায় একপর্যায়ে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ডে রিমুর দুচোখ ও নাক ঢেকে যায় এবং অসুস্থ স্থানে পচন ধরে পুঁজ বের হওয়াসহ দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। এ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় বিছানায় দিন কাটছিল রিমুর।

জিয়াউর রহমান/এমএসআর