‘দামে কম মানে ভালো, কাকলি ফার্নিচার’ নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর এ লাইনটি এখন সবার মুখে মুখে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পর বাংলাদেশেও ভাইরাল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এ বিজ্ঞাপন। কিন্তু অনেকের কাছেই কাকলি ফার্নিচারের বিষয়টি অজানা রয়ে গেছে।

২০ বছর আগে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তার শ্রীপুর সড়কে ছোট্ট পরিসরে কাঠের তৈরি ফার্নিচার বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন আবুল কাশেম। ছোট মেয়ে কাকলির নামেই গড়ে তুলেন প্রতিষ্ঠানটি। পরে সেই ব্যবসার হাল ধরেন তার ছেলে এসএম সোহেল রানা। 

ছোট বোন কাকলির স্বামী আমান উল্ল্যাহকে নিয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঠের তৈরি ফার্নিচারের পাশাপাশি বাজার চাহিদা মোতাবেক ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে মাওনা চৌরাস্তা, ময়মনসিংহ শহর ও ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি শো-রুমের মাধ্যমে তিনি কাকলি ফার্নিচারের পণ্য বিক্রি করে থাকেন।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এসএম সোহেল রানা বলেন, ৯ এপ্রিল দুই বোন মাইশা (৯) ও আতিকাকে (৮) নিয়ে তাদের মা এসেছিলেন মাওনা চৌরাস্তায় কাকলি ফার্নিচারের শোরুমে কেনাকাটা করতে। তাদের ‘দামে কম মানে ভালো, কাকলি ফার্নিচার’ স্লোগান ধরিয়ে দিয়ে একটি সোফাসেটের ওপর উঠে লাফাতে বলা হয়।

পরে তিনি মুঠোফোনে এক মিনিটের একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। গত ৯ এপ্রিল তিনি এই দুই শিশুকে নিয়ে এক মিনিটের বিজ্ঞাপন তৈরি করে তার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেছিলেন। ‘দামে কম, মানে ভালো কাকলি ফার্নিচার’ স্লোগানে বিজ্ঞাপনটি নেট মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

হঠাৎ মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে তার মুঠোফোনে অনবরত ফোন আসতে থাকে। ফোনের কলার সকলেই একটি স্লোগানে দিচ্ছিল ‘দামে কম মানে ভালো, কাকলি ফার্নিচার’। এরপর তিনি দেখেন তার ফেসবুকে পোস্টকৃত বিজ্ঞাপনটির ভিউয়ার মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

কয়েকদিন ধরেই তার মুঠোফোনে আসা অধিকাংশ ফোনই পশ্চিমবঙ্গের। তারা সেখানে কাকলি ফার্নিচারের শোরুম খুলতে অনুরোধ জানাচ্ছেন। ট্রল যাই হোক বাংলাদেশের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে নিয়ে নেটমাধ্যমে আলোচনা হওয়ায় তিনি অভিভূত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যমও ফোন করে তার অনুভূতি ও তার কাকলি ফার্নিচার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

আর পশ্চিমবঙ্গজুড়েই কাকলি ফার্নিচার নিয়ে ট্রলে মজে রয়েছে নেটমাধ্যম। পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার, এই সময়, জি-২৪ ঘণ্টাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে কাকলি ফার্নিচারের সংবাদটি। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই কাকলি ফার্নিচার নিয়েই দেশ-বিদেশে আলোচনা সবার মুখে মুখে।

জানা যায়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামীদামি ব্রান্ডের বোর্ড কিনে নিজস্ব ডিজাইনার দিয়ে নিজ বাড়ির পাশেই স্থাপিত কাকলি ফার্নিচারের কারখানায় ঘর ও অফিসের আসবাব তৈরি করা হয়। নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত এসব আসবাবপত্র বাজারে অন্যান্য আসবাবপত্রের তুলনায় দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে কাকলি ফার্নিচার।

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা, ময়মনসিংহের স্কয়ার মাস্টারবাড়ি, ময়মনসিংহ শহরের ধোপাখোলায় কাকলি ফার্নিচারের শোরুম রয়েছে। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত সামগ্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়।

চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, আমি পেশায় একজন সাংবাদিক। পরিবারের বড় সন্তান আমি। বাবার পাশাপাশি পরিবার চালানোর দায় অনেকটা আমার ওপর এসে পড়ে। আমরা পারিবারিকভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘দামে কম মানে ভালো, কাকলি ফার্নিচার’ স্লোগানটি ব্যবহার করেছি।

তিনি আরও বলেন, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিজ্ঞাপনটি আমার নিজের মোবাইল ক্যামেরায় কোনোমতে বানানো হয়েছে। অনেকেই বিজ্ঞাপনটিকে নেগেটিভভাবে নিয়েছেন, বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তবে যে যেভাবেই নিক না কেন কাকলি ফার্নিচার এখন এপার বাংলা-ওপার বাংলার সবার মুখে মুখে। এটাই আমার বড় পাওয়ার।

শিহাব খান/এমএসআর