পাবনার চাটমোহর উপজেলার সেই এনজিওর পক্ষ থেকে গাভীর বাছুর বুঝে পেয়েছেন হতদরিদ্র ১০ জন নারী। গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে তাদের বাছুর পৌঁছে দিয়েছে এনজিও কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে, মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিওর ‘বাছুর নিয়ে ফটোসেশন’ শীর্ষক সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে তালিকাভুক্ত নারীদের বাড়িতে বাছুর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বাছুর নিয়ে ফটোসেশন’ শীর্ষক সংবাদকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজারে সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। 

লিখিত বক্তব্যে মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু বলেন, ১৯৯৮ সালে নিবন্ধিত  মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থাটি পাবনা জেলায় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে কাজ করে আসছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবেও বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের ১৪টি কাজ বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, বিএনএফের বিভিন্ন কর্মূসচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিশেষ অনুদানে চাটমোহর উপজেলার একটি গ্রামের ১০ জন নারীকে স্বাবলম্বী করতে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দে প্রথম কিস্তিতে ৩ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ অবস্থায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে দশজন নারীকে ১০টি বাছুর কিনে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সে মোতাবেক প্রশিক্ষণ শেষে গত ৩০ ডিসেম্বর বেজপাড়া গ্রামের দশজন নারীকে ১০টি বাছুর প্রদান করা হয়। তবে ওইদিন অতিরিক্ত কয়েকজন নারী এসেছিল। তাদের বলা হয়েছিল, এখন নয়, তাদের পরে দেওয়া হবে।

এম এস আলম বাবলুর অভিযোগ, বাছুর প্রদান করার পর থেকে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আমার এনজিওর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। 

প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, বাছুর বিতরণে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি করা হয়নি। সাংবাদিকদের ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর-ই প্রশিক্ষণ শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে গাভীর বাছুর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাছুরগুলো শরৎনগর হাট থেকে কিনে বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কেনার রশিদ ও সুফলভোগী দশজন নারীর তালিকাও প্রদর্শন করেন নির্বাহী পরিচালক বাবলু। এ সময় সেখানে উপস্থিত সুফলভোগী কয়েকজন নারী বাছুর পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি হেলালুর রহমান জুয়েল, সহ-সভাপতি সঞ্জিত সাহা কিংশুক, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তবে সুফলভোগী ১০ জন নারীর তালিকা ধরে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ভাইরাল হওয়ার পর গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে তালিকাভুক্ত নারীদের বাড়িতে বাছুর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে দেওয়া হয়নি।

উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের সুফলভোগী ১০ জনের মধ্যে সুলতানা পারভীন, রাশিদা খাতুন, জীবন নাহার বলেন, আমাদের প্রথমে তালিকা করে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারপর গত ৩০ ডিসেম্বর বাছুর দেওয়া হয়েছে।

তবে কোহিনুর খাতুন নামে একজন জানান, প্রশিক্ষণ দিয়েছে ৩০ ডিসেম্বর। আর গরু পাইছি গত পরশুদিন (১৭ জানুয়ারি) রাতে। 

প্রতিবেশী ভ্যানচালক মোফাজ্জল হোসেন কাজল জানান, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে একটি গাড়িতে করে বাছুরগুলো সবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ শেষে ১০ জন নারীর হাতে বাছুরের দড়ি ধরিয়ে ফটোসেশন করে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়। পরে তাদের বাছুর দেওয়া হবে বলে তাদের আর বাছুর দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগ ওঠে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামে এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়।

রাকিব হাসনাত/আরএআর