বিনা খরচে বর্ণাঢ্য আয়োজনে গাঁটছড়া বাঁধলেন ১২ দম্পতি
বিয়ের সাজে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে কনেদের আগমন। অন্যদিকে গাড়িবহর নিয়ে আরব যুবকদের সাজে একে একে আগমন বরদের। বর্ণাঢ্য সাজসজ্জা আর আনন্দঘন পরিবেশে ছিল বিয়ের সব আয়োজন। যেখানে ছিল গল্প, আবেগ আর অনুভূতির পরশ ছোঁয়া। বিয়ের বন্ধনে এক হয়েছে ৪৮টি হাত, যা নজর কেড়েছে সবার।
‘বিয়ে আপনার, খরচ আমাদের’- এই স্লোগানে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এই বিয়ে। একই মঞ্চে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এক ডজন দম্পতি।
বিজ্ঞাপন
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে টাকা, বিয়ের রেজিস্ট্রেশন, বর-কনের পোশাক, সাজসজ্জা, প্রসাধনী, অতিথিদের আপ্যায়ন সবকিছুই বহন করেছে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন। শুধু তাই নয় বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য থাকছে কক্সবাজারে হানিমুনের সুযোগও। শর্ত শুধু একটাই, নেওয়া যাবে না কোনো যৌতুক, চাওয়া যাবে না অতিরিক্ত কাবিন।
যখন বর-বধূ বেশে নবদম্পতিরা হাজিন হন তখন তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন। এরপর বর ও কনের পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ান বগুড়া বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব মুফতি মনোয়ার হোসেন। বিয়ে পড়ানো শেষে বর-কনে ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নবদম্পতিদের মধ্যে দেড় লাখ টাকা দেনমোহর আদায় করে শামীম আখতারের সঙ্গে জহুরুন নেছা টুম্পা, এক লাখ টাকা দেনমোহরে মনিরুল ইসলামের সঙ্গে তানিয়া ইয়াসমিন বর্না ও ৬৫ হাজার ৫৯৯ টাকা দেনমোহর আদায় করে রাইদ সরকারের সাঙ্গে মোবাশ্বিরার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
অন্যদিকে ৫১ হাজার টাকা দেনমোহর আদায় করে শাহরিয়ার ইসলাম লিখনের সঙ্গে শারমিন সুলতানার, ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে আবদ্ধ হন রাকিবুজ্জামানের সঙ্গে তাসনিমা জান্নাত তাসমি, ফুয়াদ মিয়ার সঙ্গে হাওয়া বিবি, জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে সার্জিনা আক্তার, ফাহিম মিয়ার সঙ্গে নুসরাত জাহান আন্নি মনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এ ছাড়াও ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর আদায় করে সাব্বির হাসান রাব্বীর সঙ্গে নাসরিন জাহান নিতু, ২০ হাজার টাকা দেনমোহরে আল-মামুন মিয়ার সঙ্গে জুলি আক্তার, ১০ হাজার টাকা দেনমোহরে রুহুল প্রামাণিকের সঙ্গে কেয়া জান্নাতি একা, তানজীর ইসলামের সঙ্গে মনিরা খাতুন সুইটির বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আরও পড়ুন
এদিকে এমন আয়োজনে সঙ্গী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত নবদম্পতি ও অতিথিরা। বর তানজীর ইসলাম বলেন, যৌতুকবিহীন ও মোহরানা আদায় করে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। আয়োজকরা আমাদের যথেষ্ট সম্মান করেছেন। ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এক নবদম্পতি বলেন, আমরা এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। আমরা এমন খবর পেয়ে নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে এসেছি। এমন আয়োজনে আমরা ভীষণ খুশি।
বিয়ের পিঁড়িতে বসা এই ১২ দম্পতি রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঢাকা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা।
এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন প্রসঙ্গে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা যৌতুক থেকে বিমুখ করতেই এই আয়োজন করছি, যাতে মানুষ সত্যের পথে আসে। বিয়েকে আমরা সহজ করতে চাই। মূলত যৌতুকের কুপ্রথা বিলুপ্তির পাশাপাশি লোভ দেখানো দেনমোহরে না ঝুঁকতেই এমন আয়োজন, যা আমরা সমাজের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আয়োজনের শুরুতে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়েছিল। তখন সারা দেশ থেকে ৫৯৫টি আবেদন জমা পড়ে। বিশেষ করে রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা এবং সিলেটসহ উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ এই উদ্যোগে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে প্রথম আয়োজনটি যেহেতু চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে তাই দূরত্বের কারণে অনেকেই পারিবারিকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এবার রংপুর বিভাগে এই আয়োজন। আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষজন অংশ নিতে পেরেছে এজন্য ভালো লাগছে।
মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, বিনা খরচে বিয়ের এই আয়োজনে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ৫৯৫ জন বিয়ের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে প্রথম পর্যায়ে ৮ দম্পতির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এবার দ্বিতীয় আয়োজন আমরা রংপুর বিভাগে ১২ দম্পতির বিয়ে সম্পন্ন করলাম।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ