ত্রিশ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ঠাকুরগাঁও পৌরসভাটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৯৭ সালে। এত বছর পরেও পৌর এলাকার নাগরিক সেবায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। পৌরসভার পাড়া-মহল্লার অধিকাংশ রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বেশির ভাগ রাস্তার পিচ ও ইট-খোয়া উঠে বহু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়কে নিত্যদিন চলাচলকারী ব্যক্তিদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, পৌরসভায় কোনো তহবিল নেই, যা ছিল সাবেক মেয়র শূন্য করে রেখে গেছেন।

পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, মোট ১৩৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৮৫ কিলোমিটার পাকা করা হলেও বাকি ৫০ কিলোমিটার সড়ক এখনও কাঁচা অবস্থায় রয়ে গেছে। আবার যে সড়কগুলো পাকা করা হয়েছিল, সেগুলোরও অধিকাংশ জায়গায় ঢালাই উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ।

সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, সত্যপীর ব্রিজ থেকে চৌরাস্তা, বরুনাগাঁও থেকে চৌরাস্তা, গোয়ালপাড়া এবং হাজীপাড়ার সড়কগুলোর পিচ উঠে এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। পূর্ব গোয়ালপাড়া এলাকায় ছোট-বড় অনেক গর্ত রয়েছে। স্বর্ণকারপট্টি থেকে ফাড়াবাড়ি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার প্রায় পুরো অংশের পিচ ও ইট-খোয়া উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকায় রাস্তাঘাট, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সড়কে যানজটের বেহাল অবস্থা। পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নর্দমার মধ্যে জমে থাকছে ময়লা পানি। ভাঙাচোরা নর্দমায় ঢাকনাও নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বর্জ্যের স্তূপ। কয়েকটি রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর অন্ধকারে চলা যায় না। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত হাটবাজার ও বাস টার্মিনালে সংস্কার নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত বাস টার্মিনালটির অবস্থাও বেহাল। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ময়লা ফেলছেন অনেকেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে পৌরসভার রাস্তাঘাটের অবস্থা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পৌরসভায় উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় না করায় রাস্তাগুলো পাকিস্তান আমলের মতোই রয়ে গেছে। এতে চলাচল করতে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। রাস্তায় নোংরা ময়লা ফেলে রাখা হয়। এমন অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে বসবাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের।  পৌরসভার ৮টি মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১২টি ওয়ার্ডে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। জনসংখ্যা বাড়লেও নাগরিক সেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা চলে আসছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা মুকুল বলেন, শুধু আশ্রমপাড়ায় না ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়কের বেহাল দশা। আশ্রমপাড়ার সড়কটি দেখে মনে হয় না এটা পাকা। সড়কে সবকিছু উঠে গিয়ে এখন কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির কারণে আজকে পৌরসভার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেন ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দিয়ে এমন অবস্থা।

রুবেল রানা নামে এক বাসিন্দা বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও এর আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। তাদের দায়িত্ব ছিল রাস্তাঘাটগুলো মেরামত করা, কিন্তু তারা তা করেননি। আশা করি এখন যারা দায়িত্বে আছেন তারা এই বিষয়গুলোর সমাধান করবেন।

হাজীপাড়ার বাসিন্দা কামাল উদ্দীন বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের পেছনের রাস্তাটির পিচ ও ইট উঠে যাওয়ার কারণে অসংখ্য গর্ত হচ্ছে। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়, এতে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়।

আরেক বাসিন্দা বলেন, হ্যাডসের মোড় থেকে গোয়ালপাড়া শাপলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থাও চরম দুর্দশাগ্রস্ত। ২০০২ সালে একবার এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল। তারপর থেকে এই রাস্তার আর কোনো কাজ হয়নি। রাস্তাটি ঠিক করার জন্য এলাকাবাসী বারবার পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরকে আকুতি জানালেও এ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় কোনো তহবিল নেই, যা ছিল আগের মেয়র-কাউন্সিলররা সব শূন্য করে রেখে চলে গেছেন। যা বরাদ্দ পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বাদ দিয়ে কবরস্থানের রাস্তা ও প্রাচীর নির্মাণে ব্যয় করেছে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, সড়কগুলোর জরুরি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কারকাজ শুরু হবে।

এএমকে