রংপুরে হেযবুত তাওহীদ নিষিদ্ধ করাসহ ইসলাম বিদ্বেষী বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ধর্মপ্রাণ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। দাবি আদায়ে বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে নগরীর কাচারি বাজারের সামনে মুসলিম উম্মাহর ব্যানারে মানববন্ধন সমাবেশ, ডিসি অফিস ঘেরাও এবং স্বারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। 

এর আগে, সকালে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কয়েক হাজার মানুষ। পরে কাচারি বাজারের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশে হেযবুত তাওহীদকে নিষিদ্ধের দাবি তুলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেন তারা।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, খেলাফত মজলিশের রংপুর মহানগর সভাপতি তৌহিদুর রহমান মন্ডল, পীরগাছার পারুল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ আলী খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) মো. হানিফ খান সজীব, মুসলিম উম্মাহ রংপুরের আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা আমজাদ হোসেন, মেডিকেল মোড় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মোত্তালিব মোল্লাহ, মাওলানা রবিউল ইসলাম, মুফতি সালেহ আহমাদ মুহিত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মামুন মিয়া, ছাত্র মজলিসের রংপুর মহানগর সভাপতি ইসমাইল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের পীরগাছা উপজেলা সভাপতি ইউসুফ আলী, মুসলিম উম্মাহ নেতা রবিউল ইসলাম রবিসহ অন্যরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হেযবুত তাওহীদ পীরগাছার নাগদাহ ছিদাম গ্রামে ইসলাম বিদ্বেষী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা ইসলামের নামে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেযবুত তাওহীদের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে অনেক গ্রামবাসী হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেইসঙ্গে তারা গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে। সন্ত্রাসী এ সংগঠনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হেযবুত তাহওহীদ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করে আসছে। এর আগে, আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় তারা এসব ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করে। এখনো সেই অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ প্রশাসন উল্টো নিরীহ গ্রামাবসীর ওপর হামলাকারী হেযবুত তাওহীদের মামলা নিয়েছে।

এ সময় অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করাসহ হেযবুত তাওহীদের ইসলাম বিদ্বেষী কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধের দাবি জানান, বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করে স্বারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারীরা। 

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ ছিদাম এলাকায় হেযবুত তাওহীদের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিন হেযবুত তাওহীদের বিভাগীয় প্রধানের কয়েকজন সমর্থক ও কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়।

এ ঘটনায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হেযবুত তাওহীদের বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামীম বাদী হয়ে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর ২৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫-৬শ জনকে আসামি করে পীরগাছা থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

এর আগে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হেযবুত তাওহীদের ৩৯ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত ৩শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান। ওই মামলায় হেযবুত তাওহীদের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর পরদিন হেযবুত তাওহীদ নিষিদ্ধের দাবিতে উপজেলার পারুল ইউনিয়নের দেউতি বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। এদিন সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সংগঠনটি নিষিদ্ধ করতে আল্টিমেটাম দেন তারা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে