কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইমাম হাসান আজাদ বলেছেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন দেশের সুবিশাল সমুদ্র, উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল রক্ষা, চোরাচালান ও মাদক পাচার দমনের পাশাপাশি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মানুষের মাঝে নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

গতকাল কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন বিসিজি বেইস ভোলায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইমাম হাসান আজাদ বলেন, কোস্ট গার্ডের নিরলস প্রচেষ্টায় পায়রা বন্দর বর্তমানে একটি নিরাপদ বন্দরে পরিণত হয়েছে। কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন অধীনস্থ এলাকায় নিয়মিত ফুট পেট্রোল প্রদান, দুটি জাহাজ এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন বোটের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে টহল প্রদান, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিউআরএফ ও ডাইভিং টিম মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে।

তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা তৎপরতা এবং সার্বক্ষণিক টহল পরিচালনার মাধ্যমে গত ছয় মাসে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের তত্ত্বাবধানে ৩১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৫৭ রাউন্ড তাজা গোলা, ১০ রাউন্ড ব্ল্যাংক গোলা, ৩টি সাউন্ড গ্রেনেড, ১২টি ককটেল, ৪৩টি হাত বোমা, ৭০ জন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ডাকাত, ১০ হাজার ৯৯৫ কেজি অবৈধ পলিথিন, ৩৩ জন মাদক ব্যবসায়ীসহ ১০ কেজি ৬৯০ গ্রাম গাঁজা ও ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪১১ পিস ইয়াবা, ১১৬ বোতল ফেন্সিডিল, ১ হাজার ১২০ কেজি অবৈধ হাঙ্গরের শুটকি, ৩ হাজার ১৪০ কেজি শাপলা পাতা মাছ, ৩টি হরিণের শিং, ১টি তক্ষক ও ১৭০ প্যাকেট অবৈধ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আটক করা হয়েছে।

কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার বলেন, জাটকা নিধন অভিযান, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, কম্বিং অপারেশন ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৪৪ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৪০১ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল, ১২ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার মিটার চরঘেরা জাল, ৪১ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ মিটার অবৈধ মশারি জাল, ২ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ মিটার অন্যান্য অবৈধ জালসহ ৩ হাজার ৬২২টি অবৈধ জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া আনুমানিক ১ লাখ ২ হাজার ৬৩১ কেজি জাটকা, ১ হাজার ২৫০ কেজি অবৈধ সামুদ্রিক মাছ, ১ হাজার ২৪১টি পঙ্গাসের পোনা ধরার চায়সহ ৩২ হাজার ৫৬০ কেজি পাঙ্গাসের পোনা জব্দ করে জব্দকৃত পাঙ্গাসের পোনা মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের নিয়মিত অভিযানে নদীতে পাঙ্গাস মাছের বিচরণ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতীয়মান। এছাড়া নিয়মিত মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গত ৬ মাসে বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৭৮৬ জন অসহায়, গরিব, দুস্থ ও শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ ইমাম হাসান আজাদ বলেন, বর্তমান দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন কর্তৃক ৬১ জন দুর্বৃত্তকে আটক করে আইনের আওতায় সোপর্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারি লাইন অতিক্রমকারী বাংলাদেশে আটক থাকা ৩১ জন ভারতীয় জেলেকে ২টি বোটসহ পটুয়াখালী কারাগার থেকে মুক্তি পরবর্তী ভারতীয় কোস্ট গার্ডের নিকট হস্তান্তরের কার্যক্রম গ্রহণে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন সার্বিক সহযোগিতা করে।

তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় এলাকায় চোরাচালান, মাদক পাচার রোধ এবং সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২৪ ঘণ্টা টহল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় নদীদূষণ প্রতিরোধে এক্সারসাইজ ল্যামোর পরিচালনা করা হচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ জোন অধীনস্থ বিভিন্ন নদী ও উপকূলীয় এলাকায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে আসছে। চেয়ারম্যান দক্ষিণ জোন সিজিএফডব্লিউ কর্তৃক ভোলা, হাতিয়া ও পাথরঘাটায় শীতার্ত অসহায় ২০০ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার বলেন, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি একটি শ্রীলঙ্কান জাহাজ পায়রা বন্দরে গমনের উদ্দেশ্যে ফেয়ারওয়ে বয়ের নিকটে নোঙ্গরে অবস্থানকালে ডাকাতির সম্মুখীন হলে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দ্রুত জাহাজের ক্রুদের উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বহিঃনোঙরে চোরাচালান দমনে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদা তৎপর রয়েছে। এছাড়াও, বহিঃনোঙরে ছিচকে চুরি এবং বাণিজ্যিক জাহাজে অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন প্রতিনিয়ত উপকূলীয় এলাকায় টহল জোরদার করে আসছে। এর ফলে যে সকল চিহ্নিত অপরাধী ছিল, তারা মোটামুটি এখন এলাকা ছাড়া হয়েছে। আমরা আপ্রাণ এবং আন্তরিকতার সাথে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি।

সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশীল করার লক্ষ্যে সমুদ্র, উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। ভবিষ্যতেও উক্ত কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত থাকবে বলে জানান কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইমাম হাসান আজাদ।

এআইএস