ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে স্কুল পরিষ্কার করতে বলায় প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনাকে মিথ্যা দাবি করে এটিকে পারিবারিক বিষয় বলছেন অভিযুক্ত দফতরি রাকিবের স্বজনরা। রাকিব ও তার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থেকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতে প্রধান শিক্ষক নীলুফা খানম স্কুলের বিষয়টি সাজিয়েছেন বলে দাবি তাদের।

রোববার (৩০ মে) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন অভিযুক্ত রাকিবের স্বজনরা।

অভিযুক্ত দফতরির পরিবারের এ দাবিকে মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করেছেন বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলুফা খানম। তিনি বলছেন, তাদের সঙ্গে পারিবারিক কিংবা জমিজমা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। বন্ধের সময় স্কুল পরিষ্কার করতে বলার কারণেই তাকে মারধর করেছেন রাকিব।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাকিবের প্রতিবেশী মো. ফেরদৌস। তিনি বলেন, গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি রাকিব খান ও প্রধান শিক্ষক নিলুফা খানম সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই-বোন। নিলুফা খানমকে মারধরের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া ও বানোয়াট।

ফেরদৌস দাবি করেন, রাকিবের বাবা আলাল উদ্দিন মারা যাওয়ার পর থেকে রাকিবের সম্পত্তিতে চোখ পড়ে নিলুফা খানমের। পরিবারের সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। বিষয়টি স্থানীয়রাও অবগত রয়েছেন।

এ ঘটনার জেরে গত ২৭ মে দুপুর ১২টার দিকে স্কুল বন্ধ করে রাকিব ও নিলুফা বাড়িতে আসার দুই ঘণ্টা পর আগের জের ধরে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিলুফা খানম স্কুল পরিষ্কার করার কথা বলায় রেগে দফতরি রাকিব খান তাকে মারপিট করেছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিলুফা খানমের পরিকল্পনায় রাকিব খান ও তার বড় ভাই নাদিম খানের বিরুদ্ধে মামলা এবং রাকিবকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত না করেই রাকিব খানকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলেও অভিযোগ রাকিবের পরিবারের।

যা বলছেন প্রধান শিক্ষক নীলুফা খানম
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী নীলুফা খানম সংবাদ সম্মেলনে রাকিবের পরিবারের পুরো বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করেছেন। তিনি বলেন, জমিজমা নিয়ে কোনো ধরনের বিরোধ থাকলে ইউএনও কার্যালয়ে কিংবা থানায় তাদের অথবা আমাদের অভিযোগ থাকত। কিন্তু এমন কোনো অভিযোগ তারা দেখাতে পারবে না। সুতরাং এটিকে পারিবারিক ইস্যু হিসেবে চালিয়ে দিয়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এলাকার অনেকের সামনেই রাকিব আমাকে মেরেছে এবং বন্ধের সময় স্কুল পরিষ্কার করতে বলার কারণেই মেরেছে। এখন যারা তাদের পক্ষে সাফাই গাইছে, তাদের অনেকে ঘটনাস্থলেই ছিল না। আবার অনেকে তাদের ভয়ে মিথ্যা এসব কথা বলছে। কারণ, রাকিবরা এলাকায় প্রভাবশালী এবং তারা যে মাদক ব্যবসায়ী, তা ওপেন সিক্রেট। তারা এলাকার একটি নির্দিষ্ট সার্কেল মেন্টেইন করে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না।

প্রধান শিক্ষক নীলুফা খানম বলেন, মামলা তুলে না নিলে ও রাকিবের চাকরি ফিরিয়ে না দিলে তারা আমার ও আমার পরিবারের ক্ষতি করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। এতে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছি।

অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দফতরিকে চাকরিচ্যুত
গফরগাঁও উপজেলার সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সবুজ মিয়া বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিন সদস্যের একটি কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পায়। সে পরিপ্রেক্ষিতেই দফতরি রাকিব খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে যদি এটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় কিংবা পুনরায় তদন্তের দাবি করে, তাহলে তারা চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে পারবে বলেও জানান এ শিক্ষা কর্মকর্তা।

আসামি রাকিবের জামিন নামঞ্জুর
প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলার আসামির জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার ভার্চুয়ালি এ শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান।

এদিকে মামলার বাদীকে হুমকি-ধমকি নিয়ে সাধারণ ডায়েরির ব্যাপারে ওসি বলেন, সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উবায়দুল হক/এনএ