তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় বাদামখেত তলিয়ে গেছে

কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার বিভিন্ন চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে ব্যাপক পরিমাণে বাদাম চাষ করছেন এখানকার কৃষকরা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ বেশি হয়েছে।

তবে হঠাৎ নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে বাদামখেত। কষ্টের ফসল বাঁচাতে বেশি দাম ও ঠিকমতো পরিপক্ব না হতেই বাদাম তুলে ফেলছেন চাষিরা। তাই বড় লোকসানে আশঙ্কা দেখছেন তারা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৫০ হেক্টর জমিতে। তবে অর্জন হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫০ হেক্টর জমিতে বেশি অর্জিত হয়েছে।

অনেক চরে জেগে ওঠা বালুমাটিতে বাদাম চাষ উপযোগী। এ অঞ্চলের মানুষজন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ফসলের প্রকারভেদ অনুযায়ী সাদা ধবধবে বালুর বুক চিরে বাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে মূলত বাদাম ব্যাপক পরিসরে চাষ করতে দেখা যায়।

বাদামচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালুমাটিতে মূলত বাদাম চাষ উপযোগী। এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষে সব মিলে ব্যয় হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমিতে বাদাম উৎপাদন হবে ৭ থেকে ৮ মণ। বাদাম জমিতে বপন করার পর থেকে পরিপক্ব হতে প্রায় চার মাস সময় লাগে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে। তবে আগের চেয়ে বর্তমানে বাজারে বাদামের চাহিদা বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন এখানকার চাষিরা।

রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের কিতাব খা গ্রামের বাদামচাষি আব্দুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় বাদামখেত তলিয়ে গেছে। কিছু গাছের বাদাম পরিপক্ব হয়নি। তা ছাড়া বেশি দাম দিয়ে জমি থেকে বাদাম তুলতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাদামের যে ফলন হয়েছে, তা থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। খেত ডুবে যাওয়ায় এখন আসল টাকাই উঠবে কি না, সেই চিন্তায় আছি।

একই গ্রামের বাদামচাষি আবু তালেব বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করছি, কমপক্ষে ১৫ মণ হওয়ার কথা ছিল। সে জায়গায় ১০ মণ বাদাম হবে কি না সন্দেহ রয়েছে আমার। হঠাৎ পানি আসার কারণে সমস্যাটা হয়েছে। অনেক বাদাম পানির নিচে পড়েছে, আবার ভেসেও গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদ-নদীর পানিবৃদ্ধিতে নদীর অববাহিকায় বিছিন্নভাবে কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, সে বিষয়টি আমরা দেখব।

মো. জুয়েল রানা/এনএ