ফেনীতে মাদককারবারিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জানিয়েছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। একইসঙ্গে মামলার বাদী ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১১টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিক ও ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তব্যে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবু তাহের বলেন, অপরাধ স্বীকার করেছে আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিককে হয়রানিও করছে। আমরা দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহার ও তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।

সভাপতির বক্তব্যে ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ফেনীতে এর আগেও সাংবাদিকদের হামলা-মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। এবারও একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে এ মাদককারবারি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। দ্রুতই এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আত্মস্বীকৃত এ মাদককারবারিকে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন দৈনিক সংগ্রামের প্রতিনিধি একেএম আব্দুর রহিম, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবু তাহের, চ্যানেল ২৪-এর জেলা প্রতিনিধি দিলদার হোসেন স্বপন, মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব জসিম মাহমুদ, আরটিভির জেলা প্রতিনিধি আজাদ মালদার, এবি পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম বাদল, ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিক আল মামুন, দৈনিক নয়া পয়গামের সম্পাদক এনামুল হক পাটোয়ারী, ফেনী সমাচার-এর সম্পাদক মুহিব্বুল্লাহ ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধি আবদুল কাইয়ুম সোহাগ, বাংলাদেশ বেতারের জেলা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন, আমার দেশের জেলা প্রতিনিধি এসএম ইউছুপ আলী, দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার সম্পাদক ফিরোজ আলম, দেশ রূপান্তরের জেলা প্রতিনিধি শফি উল্লাহ রিপন, যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি যতন মজুমদার, যমুনা টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুর রহমান, সময় টেলিভিশনের সহযোগী সিনিয়র রিপোর্টার আতিয়ার সজল, ইনডিপেনডেন্ট টিভির সমির উদ্দিন, ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি মাইন উদ্দিন, সাইবার ইউজার দলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রাসেল, উদয় পত্রিকার সম্পাদক সাঈদ খান, নিউজ ২৪-এর জেলা প্রতিনিধি সৈয়দ ইয়াসিন সুমন, ইয়ুথ জার্নালিস্ট ফোরাম ফেনীর সভাপতি শাহজালাল ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান হাজারী ডালিম, মানবজমিনের প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম, ফটোজার্নালিস্টের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রুবেল, পরশুরাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএ হাসান, সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন, যায়যায়দিনের ফুলগাজী প্রতিনিধি সাহাব উদ্দিন, দৈনিক ফেনী নিজস্ব প্রতিবেদক মো. মোর্শেদ, নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ইউপি সদস্য রহিম উল্ল্যাহ বাদী হয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক তারেক চৌধুরীকে এক নম্বর আসামি করে ফেনী আদালতে এ মামলা করেন। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ভুল নাম-পদবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- আসামি হিসেবে দৈনিক ফেনী পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখা হয়েছে আরিফুর রহমান, যদিও তার নাম আরিফুল আমিন রিজভী। এ ছাড়া দৈনিক ফেনীর রিপোর্টার হিসেবে দেখানো হয়েছে মামুনুর রহমানকে, ঢাকা পোস্টের রিপোর্টার হিসেবে দেখানো হয়েছে জামশেদ আলম অনিক ও ওমর ফারুক নামে দুজনকে—বাস্তবে এদের কেউ এজাহারে উল্লেখিত পদে নেই।

মামলার এজাহারে নিজেকে জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ইউপি সদস্য উল্লেখ করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাদককারবারি রহিম উল্ল্যাহ।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ‘সীমান্তে চোরাচালানের সাম্রাজ্যে ইউপি সদস্য, বললেন পেশাই এটি’ শিরোনামে মাদক কারবার, চোরাচালান ও মানবপাচার চক্র নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ফেনী। এতে মাদককারবারি হিসেবে ফুলগাজী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহসহ বেশ কয়েকজনের নাম ওঠে আসে।

এমজেইউ