৬ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি সাভারের বিসিক চমড়া শিল্প নগরী ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি। সরকার ঘোষিত পাঁচটি গ্রেডে মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে কয়েক দফায় আন্দোলন করেন ট্যানারি শ্রমিকরা। তবে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরির বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে বলে দাবি মালিকপক্ষের। 

বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে জাতীয় শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে সাভারের হরিণধরায় চামড়া শিল্প নগরীতে শ্রমিক সমাবেশে শ্রমিক ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা এসব তথ্য জানান। 

শ্রমিকরা বলেন, গত বছরের ২৪ নভেম্বর সরকার ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে মজুরি কাঠামোর নির্দেশ দেন ট্যানারি মালিকদের। কিন্তু মালিকপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে  ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করেনি। তবে ট্যানারি শ্রমিকরা কয়েক দফায় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করলেও শুধু আলোচনাই হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর কোনো সুফল পায়নি বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্যানারি শ্রমিকদের গত তিন বছর ধরে কোনো মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ট্যানারি মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকার ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছিল। ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসে সরকার যে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছিল, সে হিসেবে ১৮ হাজার ১ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা আজও সেই মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন করেনি। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে গত সপ্তাহে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সরকার ঘোষিত মজুরি বোর্ড অনুসারে মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আরও কিছু সিদ্ধান্ত এখনো আলোচনাধীন রয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ট্যানারি শিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের নতুন মজুরি কাঠামোতে প্রথম গ্রেডে আছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামত মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান, বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক। বিভাগীয় শহর ও সাভারে এই গ্রেডের শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা। বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার ট্যানারি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা ও চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা করা হয়েছে। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকেরা রয়েছেন সর্বশেষ বা পঞ্চম গ্রেডে। এই গ্রেডের ন্যূনতম মজুরি বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা।    

লোটন আচার্য্য/আরএআর