কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে ছোট্ট আব্দুল্লাহ
দীর্ঘ ১২ বছরের অপেক্ষার পর বাগেরহাটের রামপালের মানিকনগর হাওলাদার বাড়িতে আলো হয়ে এসেছিল এক পুত্রসন্তান। নূরনবী হাওলাদার ও মুসলিমা বেগম দম্পতির সেই আনন্দের আকাশে আজ কালো মেঘ। আব্দুল্লাহ হাওলাদার (১১) নামের সেই ফুটফুটে শিশুটির শরীরে দুই বছর বয়সে ধরা পড়ে নেফ্রোটিক সিনড্রোম। ৯ বছর যাবৎ অসহ্য যন্ত্রণার এই রোগ বয়ে বেড়াচ্ছে সে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা। সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।
আব্দুল্লাহ জন্মের পর থেকেই এই কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের জটিলতায় জর্জরিত ছোট্ট শরীর। পড়াশোনা তো দূরের কথা, বন্ধুদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলাও করতে পারে না। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা শিশুটির কষ্ট যেন থামার নয়। স্বপ্ন ছিল কুরআনের হাফেজ হবে, সেই স্বপ্ন যেন আকাশচুমি।
বিজ্ঞাপন
কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুল্লাহর বাবা নূরনবী হাওলাদার। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ৯ বছর ধরে আমার একমাত্র ছেলেটা এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে। ঠিকমতো বসতে পারে না, হাঁটতে পারে না, এমনকি শুয়ে থাকতেও কষ্ট হয়। প্রতিদিন ওর চিকিৎসার জন্য লাগে ৮০০ টাকার ওষুধ। অথচ আমি অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালাই। ছেলের চিকিৎসার খরচ তো দূরের কথা, ওষুধ কেনাটাই আমার কাছে পাহাড়সম।
তিনি আরও বলেন, ছয় মাস আগে অনেক কষ্টে ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা বলেছেন, সঠিক চিকিৎসা করাতে হলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে স্বপ্নের মতো। কী করবো? কার কাছে যাবো? একমাত্র সন্তানের এই অবস্থা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
বিজ্ঞাপন
আব্দুল্লাহর মা মুসলিমা বেগম বলেন, এক যুগ নিঃসন্তান থাকার পর আমাদের জীবনে আলো হয়ে আসে আমার একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ। ওর মুখে প্রথম হাসি, প্রথম হাঁটা সবকিছু যেন ছিল স্বর্গীয় আশীর্বাদ। ভাবতাম, তাকে কোরআনের হাফেজ বানাবো, আল্লাহর রাস্তায় নিবেদন করবো। কিন্তু আজ আমার সেই স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেটা এখন প্রতিদিন চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছে, আমরা কিছুই করতে পারছি না। চিকিৎসার অভাবে ওর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমার শুধু একটাই চাওয়া আমার ছেলেটা যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যেন আমাদের দিকে তাকায়। সমাজের ধনী ব্যক্তিরাও যদি একটু সহানুভূতি দেখাত, তাহলে হয়তো আমার সন্তানটাকে বাঁচানো যেত।
আমি বাঁচতে চাই, কান্না ভেজা কণ্ঠে আব্দুল্লাহ বলে, আমার লিভার, ফুসফুসে জটিল সমস্যা। রক্তে লবণের মাত্রা স্বাভাবিক নাই, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। অসহনীয় জ্বালাপোড়া আর ব্যথায় দিন-রাত ছটফট করি। শরীর ফুলে গেছে। চিকিৎসায় বাবার সর্বস্ব চলে গেছে। এখন আমার বাবা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে এখন সমাজের সহৃদয়, বিত্তবান মানুষদের দিকেই তাকিয়ে আছি। প্লিজ, আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।
আরও পড়ুন
মো. জাবের নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ছোট্ট বাচ্চাটার কষ্ট সহ্য করা যায় না। নূরনবী চাচা আব্দুল্লাহকে কাঁধে করে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। তার অবস্থাও খুব খারাপ। বিত্তবান ও প্রভাবশালীরা যদি একটু এগিয়ে আসেন, তাহলে আব্দুল্লাহ হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
আরেক প্রতিবেশী রহিম শেখ বলেন, আব্দুল্লাহর পরিবার খুব অসহায়। এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন এই শিশুটির সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. স্বাগতম বিশ্বাস বলেন, আব্দুল্লাহ নেফ্রোটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই তার বাড়ি হওয়ায় অসুস্থ বোধ করলে প্রায়ই এখানে চলে আসে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি তাকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার। তবে মূলত তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন।
১১ বছরের আব্দুল্লাহর জীবন আজ সংকটাপন্ন। তার পরিবারের আকুতি, সমাজের হৃদয়বান মানুষেরা যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এই ছোট্ট জীবনটিকে বাঁচিয়ে তোলেন। একটু সহানুভূতি আর আর্থিক সহায়তা ফিরিয়ে দিতে পারে আব্দুল্লাহর মুখে হাসি, সমাপ্তি ঘটাতে পারে দীর্ঘ ৯ বছরের অসহ্য যন্ত্রণার।
শেখ আবু তালেব/এএমকে