কেন্দুয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়

নেত্রকোনায় বিধবা ভাতাভোগীদের তালিকায় মোহাম্মদ আলী নামের এক বয়স্ক পুরুষের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সুস্থ নারী-পুরুষদের নাম। এমন ঘটনা ঘটেছে জেলার কেন্দুয়া উপজেলায়।

এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে চলছে নানা রকম মুখরোচক আলোচনা ও সমালোচনা। তারা বলছেন, কত রকম অনিয়মের কথাই শুনেছি। কিন্তু এমন অনিয়মের কথা আগে আর শুনিনি। অথচ বাস্তবে এমনটাই ঘটল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

কেন্দুয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনামতে কেন্দুয়া উপজেলার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক-বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাপ্রাপ্ত সব সুবিধাভোগীর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গভর্নমেন্ট টু পাবলিক (জিটুপি) পদ্ধতিতে সরাসরি টাকা পাঠানোর জন্য ভাতাভোগীদের অনলাইন (এমআইএস) কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু ভাতাভোগীদের এমআইএসের আওতায় আনতে গিয়ে ঘটছে যত বিপত্তি। কারণ, ভাতাভোগীদের সব তথ্য যাছাই করতে গিয়ে বয়স কম প্রমাণিত হচ্ছে অনেকের। এ কারণে বাদ পড়ছেন অসংখ্য বয়স্ক ভাতাভোগী।

এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, বয়স কম প্রমাণিত হওয়ায় ভাতাবঞ্চিতদের কাছ থেকে কতিপয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উৎকোচ গ্রহণ করেন। অবৈধ পন্থায় কোড নম্বর পরিবর্তন করে কম বয়সী সেসব নারী-পুরুষকে যেকোনো ভাতার আওতাভুক্ত করতে বয়স্ক ভাতাভোগী পুরুষদের প্রতিবন্ধী বানানো হয়েছে আর বয়স্ক ভাতাভোগী নারীদের বিধবা বানানো হয়েছে।

উপজেলার ১০ নম্বর কান্দিউড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্গ গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আলীকে বয়স কম প্রমাণিত হওয়ায় বিধবা ভাতাভোগী বানানো হয়েছে।

একই ইউনিয়ের তেঁতুলিয়া গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী মিন্টু দেবনাথ, রাঘবপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার, আব্দুল আজিজ, মো. মোসলিম, পালড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার, আব্দুল মন্নাফ ও বিঞ্চুপুর গ্রামের সিরাজ মিয়াকে কোড নম্বর পরিবর্তন করে বানানো হয়েছে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী এবং বয়স্ক ভাতাভোগী চৌমুরিয়া গ্রামের পরিমুন্নেছা, বিঞ্চুপুর গ্রামের সুলেমা ও জাহানারা আক্তারকে বানানো হয়েছে বিধবা ভাতাভোগী।

সম্প্রতি কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় থেকে পাঠানো ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাইকালে এসব অসংগতি ধরা পড়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে।

কেন্দুয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অবর্তমানে কারিগরি প্রশিক্ষক এবং কান্দিউড়া ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বয়স জালিয়াতি করে অনেকেই বয়স্ক ভাতার কার্ড করেছিল। এখন ভাতাভোগীদের এমআইএসের আওতায় আনায় বয়স জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছে। অনেকের কার্ড বাতিল হচ্ছে। কান্দিউড়া ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের এমআইএস করা তালিকায় এমন অসংগতি পাওয়া গেছে। এখন সব ভাতাভোগীকে যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ কায়সার ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ভাতাভোগীদের এমআইএস তালিকা করেছে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা রোমান আহমেদসহ কয়েকজন। তারা ভুলে হয়তো এমনটি করেছে। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উদ্যোক্তা রোমান আহমেদ বলেন, আমি অন্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র দুই দিনে এক হাজার ভাতাভোগীর তালিকা করেছি। জানামতে আমরা কোনো ভুল করিনি। হয়তো ভুলে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। তবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। আমি কেন্দুয়া সমাজসেবা কার্যালয়ে একজন ক0র্মকর্তা পাঠিয়েছি এটি খতিয়ে দেখার জন্য। এমআইএস করা তালিকার সব অসংগতি দ্রুত সমাধান করা হবে এবং এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ