ব্লাক সুগার কেইন ১০ থেকে ১১ মাসে ফলন দেয়

ফিলিপাইনের ব্লাক সুগার কুইন। কালো দেখতে, আবার খয়েরিও। কালো-খয়েরি রঙের আখ। দেশীয় আখের মতো হলেও কাণ্ড নরমসহ বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। আখের কাণ্ড নরম, রস বেশি, মিষ্টি বেশি, চাষের পর লাভ বেশি। এসব কথা ভেবে ব্লাক সুগার কেইন চাষ শুরু করেছেন বগুড়ার সদর উপজেলার কাজী নুরইল গ্রামের আহসানুল কবির ডালিম।

আহসান কবির ডালিম ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষক। সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়ে পুরোদস্তুর। ডালিমের আখক্ষেতে ফলন ভালো হওয়ায় আশপাশের চাষিরাও ব্লাক সুগার কেইন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আশপাশের গ্রামের চাষিরা এই আখ চাষ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন।

জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে ফিলিপাইনের এই জাতের আখ চাষ করে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারবেন চাষিরা।

জানা যায়, আহসানুল কবির ডালিম ফিলিপাইনের আখ ব্লাক সুগার কেইন চাষ করেছেন ১১ শতক জমিতে। প্রথমে পরীক্ষামূলক চাষ করেন, এতে আসে সফলতা। প্রায় দুই বছর আগে ১৬টি বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। এখান থেকে টিকে যায় ৮টি বীজ। সেই ৮টি বীজ থেকে আরও বীজ তৈরি করে চাষ করেন। এখন তার জমিতে শোভা পাচ্ছে ২ হাজার ব্লাক সুগার কেইন। প্রতিটি আখ প্রায় ৭ থেকে ৮ ফুট লম্বা হয়েছে।

আখগুলো সাধারণভাবে দেখতে দেশীয় আখের মতো হলেও এর রয়েছে ভিন্নতা। আখগুলো ১০ থেকে ১১ মাসে ফলন দেয়। গোড়ালি থেকে পুরো কাণ্ডই মোটা ও কিছুটা নরম। আঙুলে একটু চাপ দিলে রস পাওয়া যায়। রস অনেক মিষ্টি। এই আখ চাষে ডালিম ব্যবহার করেছেন জৈব সার।

বিভিন্ন নার্সারি মালিক ও কৃষিভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আখক্ষেত পরিদর্শন করে বীজ কেনার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। স্থানীয় চাষিরা আহসানুল কবিরের কাছ থেকে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষের কৌশল ও বীজ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।

কাজী নুরইল গ্রামের চাষি আব্দুর রউফ, আব্দুল আলিম ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রথম দিকে তারা ভেবেছিলেন এই আখ চাষে ডালিম সফলতা পাবেন না। কারণ, এই অঞ্চলে আখ চাষ হতো কম। দেশি জাতের আখের ফলনও পাওয়া যেত না। সেখানে বিদেশি জাতের ফলন তো বহু দূরে। এখন দেখা যাচ্ছে, এটির জাত ভিন্ন এবং এই জাতের আখ বগুড়ায় প্রথম হচ্ছে বলে বাজারে চাহিদা থাকবে।

সফলতার গল্প শুনতে কথা হয় আহসানুল কবির ডালিমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, তার পরিচিতজনের মাধ্যমে ফিলিপাইনের আখ ব্লাক সুগার কেইন সংগ্রহ করার পর তার বাড়ির পাশের জমিতে চাষ করেন। বর্তমানে তার জমিতে ২ হাজারের বেশি আখ আছে। এই আখের কিছু অংশ বিক্রি করে খরচ তুলবেন আর কিছু অংশ দিয়ে বীজ তৈরি করে স্থানীয় চাষিদের মাঝে দেবেন। স্থানীয় চাষিরা তার কাছ থেকে বীজ নেওয়ার কথা বলেছেন। বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সারা বছরই চাষ করা যায় এই আখ। ফলন পাওয়া যায় প্রায় ১০ থেকে ১১ মাসের মধ্যে।

তিনি জানান, কৃষকরা যেন এই আখ চাষ করে বেশি মুনাফা করতে পারেন, সে জন্য তিনি কৃষক পর্যায়ে আখগুলো ছড়িয়ে দিতে চাইছেন। ডালিম শুধু আখ চাষ করছেন তা নয়, তার জমিতে বনসাই, মরুর গোলাপ, ত্বীন ফল, হলুদ ড্রাগন ফলও রয়েছে। তিনি একটি খামার বাড়ি গড়ার চেষ্টা করছেন।

বগুড়া সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, বগুড়ায় এই আখ আহসানুল কবির প্রথম চাষ করছেন। এই আখ চাষে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রথম ফলন পেতে খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ফলন পেতে তার খরচ কম হবে। জমি কম হলেও ভালো ফলন হয়েছে। ১১ শতক জমির ফলন ৫০ টাকা করে বিক্রি করলে ১ লাখ টাকা আর ১০০ টাকা করে বিক্রি করলে ২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন, যা খরচ বাদে অর্ধেক টাকা তার আয় হবে।

তিনি বলেন, চাষের খরচ বাদে কৃষকের আয় হবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। আবার এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার আখ পাওয়া যাবে। প্রতিটি আখ ১০ টাকা করে বিক্রি করলে প্রায় ৫ লাখ টাকা হবে। সেখান থেকে ১ বিঘা জমির সার, সেচ, বীজ, শ্রম বাদ দিলে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করা যাবে বলে তিনি জানান।

এনএ