হাতিয়ার যে হাটে একদিনেই বিক্রি হয় হাজারো গরু
বৃহত্তর নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট হাতিয়া বাজার। এটি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নে অবস্থিত। হাটটি এখন স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিতে রূপ নিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দুইবার বসা এই পশুর হাটে গরু-মহিষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। প্রতিহাটেই বেচাকেনা হয় কোটি কোটি টাকার গরু।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসা এই হাটে গড়ে চার হাজারের অধিক গরু-মহিষ-ভেড়া-ছাগল তোলা হয়। যার মধ্যে প্রায় দুই হাজার গরু বিক্রি হয়ে যায় মাত্র একদিনেই। প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা স্থানীয় প্রান্তিক খামারিদের লালন-পালন করা দেশি জাতের স্বাস্থ্যবান গরু ও মহিষ এই হাটে তোলা হয়। এসব গরুর সুনাম ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফলে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিয়মিত এই হাটে আসেন গরু কিনতে। গরুর গুণগত মান, সাশ্রয়ী দাম ও পরিবেশ— সব মিলিয়ে ক্রেতাদের জন্য এই হাট একটি নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
এই হাট ঘিরে হাজারো খামারির জীবনে এসেছে অর্থনৈতিক স্বস্তি। তারা এখন স্বপ্ন দেখেন উন্নত জীবনযাপনের, সন্তানদের পড়াশোনা করানোর, বাড়ি নির্মাণের। অনেক খামারি এখন পারিবারিকভাবে গরু পালনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পশুপালনের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও।
হরণী ইউনিয়নের এই পশুর হাট শুধু অর্থনীতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি এলাকার হাজারো খামারির জীবন ও জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গবাদিপশু বিক্রির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে এই হাট। বিশেষ করে কোরবানির মৌসুম এলে এই হাটে বেচাকেনার পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি সহায়তা এবং ভেটেরিনারি সেবার আরও উন্নয়ন হলে এই হাট বড় পরিসরে বিস্তার লাভ করতে পারে। পাশাপাশি পশু পরিবহনের জন্য একটি আধুনিক ঘাট নির্মাণ, পর্যাপ্ত শেড ও পানির ব্যবস্থা থাকলে হাটটি দেশের অন্যতম মডেল হাটে পরিণত হতে পারে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকার হাফিজ উদ্দিন জানান, হাতিয়ার গরু স্বাস্থ্যবান ও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়। এখানকার গরুতে ওষুধ বা কৃত্রিম মোটাতাজাকরণ থাকে না, এজন্য চাহিদাও বেশি। এখান থেকে নিয়ে আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটে বেশি দামে বিক্রি করি। আমরা এতে ভালোই লাভবান হই।
হরণী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চরের অনেক পরিবার আছে যারা সারা বছর ২/৩ টা গরু লালনপালন করে কোরবানির জন্য হাতিয়া বাজার পশুর হাটে বিক্রি করেন। সেই বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে নিজেদের ইচ্ছাপূরণ করেন। তবে পশুগুলো বিক্রির সময় তাদের অনেকে কান্নাও করেন। তারা যেন সন্তানকে বিদায় দিচ্ছেন এমন আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
হাটের ইজারাদার আমিরুল ইসলাম মতিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য যথাসম্ভব নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর