কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে নারীদের অংশগ্রহণ কোনোভাবেই পুরুষের চেয়ে কম নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণই বেশি। কিন্তু পুরুষের সমান পরিশ্রম করেও নারীরা দিনমজুরি পাচ্ছেন অনেক কম। এসব নারী কাজে দক্ষ হলেও পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য। পুরুষের সমান কাজ করে তারা দিনমজুরি পান ২৫০ টাকা আর পুরুষরা পাচ্ছেন ৪০০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদী অববাহিকায় ২-৩টি চরে শত শত নারী-পুরুষ নৌকাযোগে চরে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করেন। তারা সবাই অভাব-অনটনের সংসার থেকে আসেন। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ক্ষেতে বাদাম তোলা ও বাদাম শুকানোর কাজ করেন। কাজ শেষে সারাদিনের মজুরি পান ২৫০ টাকা। আর পুরুষরা সারাদিন কাজ করে পান ৪০০ টাকা।

রোববার (৬ জুন) সকালে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ীরহাট এলাকায় মাঠে কাজ করতে যাওয়া নারী দিনমজুরদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কী করব। আমরা কাজ না করলে যে সংসার চলে না। তাই যখন যে কাজ পাই, তখন সেটা করি। বর্তমানে বাদামক্ষেতে কাজ করছি।

তারা জানান, আমাদের পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি। তাই একজনের দিনমজুরির কাজ করে সংসার চলে না। তাই আমরা কাজে এসেছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের ব্যয়বহন করে যাচ্ছি। মাঠে বাদাম তুলতে যাওয়া নারীরা সবাই কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা।

তারা আক্ষেপ করে বলেন, সারা দিন এই রোদের মধ্যে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ২৫০ টাকা পাই। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। পুরুষ মানুষ সারাদিন কাজ করে ৪০০ টাকা পায়।

রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ীরহাট এলাকার নারী দিনমজুর জাহানারা ও কুলসুম বেগম বলেন, আমাদের স্বামীরাও দিনমজুরের কাজ করে। একজনের আয় দিয়ে সংসার চলে না। তাই আমরা সংসার একটু ভালোভাবে চালানোর জন্য আমরাও কাজ করছি। তবে আমাদের কষ্টের শেষ নাই। সব কাজই আমাদের করতে হয়।

তারা বলেন, প্রচুর রোদে পুরুষ মানুষও আমাদের সঙ্গে কাজ করে। অথচ তারা পায় ৪০০ টাকা করে, আর আমরা পাই ২৫০ টাকা। পুরুষদের চেয়েও আমরা বেশি কাজ করি। এখন কী করার আছে? সাধে তো আর কাজ করতে আসি নাই সংসার চলে না তাই।

কুড়িগ্রাম জেলা মহিলাবিষয়ক উপপরিচালক শাহানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে মিটিং করে ওই নারী দিনমজুরদের বারবার বলেছি, আপনারা কাজ করে টাকা কম নেবেন না। সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। তারা যদি কম মজুরিতে কাজ করেন, আমাদের কী করার থাকে? তারা আবার বলছেন, আমরা কাজ না করলে তো অন্যরা করবে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ