পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) অজ্ঞাত কারণে শতাধিক নারী শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাবনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে ঈশ্বরদী ইপিজেড ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আক্রান্তরা ইপিজেডের রেনেসাঁ, ডেনিম ভিনটেজ (এবা), নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডি, স্টেলা হেয়ারসহ অন্য কোম্পানির শ্রমিক।

জানা গেছে, ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান (ইপিজেড) দুপুরে শ্রমিকদের খাবার সরবরাহ করে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে এ খাবার খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে কিছু শ্রমিক অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিক কিছু শ্রমিক ছুটি নিয়ে চলে গেলেও পরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিকের বেশি শ্রমিক ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে যান হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকেই বাড়ি চলে গেলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে পাবনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে প্রায় ৩৫ জন রোগী ডায়রিয়া, বমি ও পেট ব্যথা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

উপজেলার ভেলুপাড়া এলাকার মো. জহুরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ইপিজেড থেকে ডিউটি শেষ করে আসার পর আমার স্ত্রীর হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে অবস্থার অবনতি দেখে হাসপাতালে এসেছি। এখানে চিকিৎসা নিয়েও কমছে না, এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাব।

ইপিজেডের স্টিল হেয়ার কোম্পানির শ্রমিক মোছা. রাবেয়া খাতুন নামে আরেকজন বলেন, বৃহস্পতিবার খাবার সময় যে পানি খেয়েছি তাতে একটু দুর্গন্ধ ছিল। সকালে ডিউটি করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি, পরে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসার পর বমি শুরু হয়। দুপুরে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। পানির কারণে সম্ভবত এমন সমস্যা হয়েছে।

এদিকে হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন নার্স, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। তারা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। এ অবস্থায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে তাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, সহজে এই ডায়রিয়া ভালো হচ্ছে না। এজন্য অনেকে উন্নত চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদীর বাইরে চলে গেছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক মোছা. উম্মে হাবিবা শ্রমিকদের অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সবারই খাদ্যে ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা হয়েছে। বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে পাবনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) এবিএম শহিদুল ইসলাম শুক্রবার রাতে বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। যে কোম্পানির শ্রমিকরা অসুস্থ হয়েছে সেই কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে অসুস্থ শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেপজা ও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইপিজেডে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের সঙ্গে আমরাও সাপ্লাইয়ের পানি পান করি। পানিতে সমস্যা হলে সব শ্রমিকসহ আমাদেরও আক্রান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে মাত্র কিছু শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। তারপরও শনিবার সাপ্লাই করা পানি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে।

ইপিজেড নাকানো কোম্পানির অ্যাডমিন মেহেদী হাসান জানান, কিছুক্ষণ আগে বেপজা কর্তৃপক্ষ বিষয়টা আমাদের অবগত করেছে। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছে। তারা গিয়ে আমাদের কোম্পানির কতজন শ্রমিক আছে তালিকা করে নিয়ে আসবে।

রাকিব হাসনাত/এসএসএইচ