করোনার কারণে এবার নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের হাট সাপাহারে ক্রেতা নেই। বাইরের ক্রেতা না আসায় আমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। একে তো আমের দাম নেই, তার ওপর ওজনে বেশি দিতে দিতে দিশেহারা আমচাষি ও বাগান-মালিকরা।

সরেজমিনে আমবাজারে দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদে ভ্যানের ওপর আম রেখে মাথায় গামছা জড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আমচাষি হোসেন আলী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের আমবাজারে এসেছেন। বেলা ৩টা বেজে গেলেও বিক্রি করতে পারেননি কোনো আম। একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

হোসেন আলী জানান, ভ্যানে করে ৬ মণ ক্ষীরশাপাত ও ৩ মণ গুটি আম নিয়ে বাজারে এসেছেন। ক্ষীরশাপাত আমের দাম ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা মণ রাখলেও ক্রেতারা দাম হাঁকছেন ১০০০ টাকা। অবশেষে ৩টার পর ১১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন আম।

দাম কম কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাজারে আমের আমদানি বেশি। সে তুলনায় ব্যবসায়ীরা কম এসেছেন। ক্রেতা কম থাকায় আমের দামও তুলনামূলক কম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এর মধ্যে সাপাহার উপজেলায় রয়েছে ৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর আমবাগান। আমবাগানকে কেন্দ্র করে সাপাহার উপজেলা সদরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আমের বাজার গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রায় দেড় শতাধিক আমের আড়ত রয়েছে। যেখানে চালু রয়েছে প্রায় ১০০টির মতো আড়ত।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলায় চলছে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন। ৯ জুন পর্যন্ত এ লকডাউন থাকবে। আর এ কারণে বাইরের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এতে দাম তুলনামূলক কম রয়েছে বাজারে।

জেলার বড় আমবাজার সাপাহারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে গুণগত মানভেদে গোপালভোগ ১২০০ থেকে ১৪৫০ টাকায়, ক্ষীরশাপাতা প্রতি মণ ১১৫০ থেকে ১৭০০ টাকায় ও নাকফজলি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে।

পোরশার মাস্টাপাড়া গ্রামের আমচাষি আহমেদ খোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে হিমসাগর আম বিক্রি করতে এসেছি। বাজারে আমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। আমরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। আর এ দামে আম বিক্রি করলে লাভবান হতে পারব না। যে দামে আম বিক্রি করছি, ব্যবসায়ীরা বাইরের জেলায় এগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে।

তিনি বলেন, এ বছর শ্রমিকদের মজুরি, সার ও কীটনাশক বেশি দিতে হয়েছে। ফলে আম উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বাজারে না আসা পর্যন্ত আমরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হব।

নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে আসা আমচাষি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে ১০ মণ গুটি আম নিয়ে এসেছি বাজারে। কিছুক্ষণ পরই ৪৭০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে দিয়েছি সেগুলো। বাজারে গুটি আমের চাহিদা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এলে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারতাম।

সাপাহারের আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, এ উপজেলায় আমের মূল ব্যবসায়ীরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট ও ভোলাহাট উপজেলার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। আবার আড়তে কাজ করতে আসা শ্রমিকদেরও করোনার পরীক্ষা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে যে কয়েকটি আমের মোকাম রয়েছে, সবগুলোয় একই সঙ্গে আমবাজারে উঠেছে ও মোকামগুলো চালু হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এখনো আসা শুরু করেননি বাজারে। বাজারে আম বেশি থাকলেও ক্রেতা কম রয়েছে। ফলে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না।


শামীনূর রহমান/এনএ