সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বাজার ভদ্রঘাট গ্রামে ছোট বোনের গায়ে হলুদের রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওমর ফারুক সেখ (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বিয়ের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে রূপ নেয়। গতকাল সোমবার (৯ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটে।  

নিহত ওমর ফারুক ওই গ্রামের মো. আব্দুল খালেক সেখের প্রথম পক্ষের সন্তান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তার মা অনেক আগেই মারা গেছেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে মাকে হারান তিনি। এরপর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই পক্ষের ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর সংসারের হাল ধরতে শুরু করে ওমর ফারুক। জীবিকা নির্বাহের জন্য স্থানীয় বাজারে তরকারি বিক্রি করত সে।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৯ জুন রাতে ওমর ফারুকের ছোট বোনের গায়ে হলুদের আয়োজন চলছিল। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ির একটি ফ্যান ঠিক করতে গিয়ে ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ওমর ফারুক। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছিটকে পড়ে যান বাড়ির বারান্দায় এবং মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। মাথার পেছনে প্রায় চার আঙ্গুলের মতো গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। স্বজনরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পথেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আদিব খান জানান, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা ফ্যানের তার বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। সেখান থেকেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ওমর ফারুক।

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ৯টায় বাজার ভদ্রঘাট পূর্ব খান পাড়া ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জেলা শহরের মালশাপাড়া কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। 

ওমর ফারুকের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় পক্ষের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। সেই মেয়েরই বিয়ের আয়োজন চলছিল সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গয়লা ইউনিয়নে। আর সেই আয়োজনের আগের রাতেই ঘটে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এজন্য সাময়িকভাবে মেয়েটির বিয়ে বন্ধ রয়েছে। পরে দুই পরিবার মিলে পুনরায় বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করবে।

এ বিষয়ে নিহতের দাদি মোছা. মর্জিনা খাতুন বলেন, ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই অনেক পরিশ্রমী ছিল। সংসারের অভাব মেটাতে পড়ালেখা ছেড়ে কাজ শুরু করেছিল। নাতনির বিয়ের আগের রাতে আমার নাতিকে হারালাম।

ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মোহাম বলেন, ওমর ফারুক খুব ভালো ছেলে ছিল। বোনের গায়ে হলুদের রাতে এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

কামারখন্দ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ঘটনাটি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। আমাদের কাছে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।

আরএআর