বকেয়া বেতন ভাতাসহ ৭ দফা দাবি ও সকল অনিয়ম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। সোমবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শিল্পনগরী কাঁচপুর এলাকার ওপেক্স ও সিনহা গ্রুপের শ্রমিকরা এ মানববন্ধন করে।

তারা সকাল থেকে কাজে যোগ না দিয়ে গার্মেন্টের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় বিক্ষিব্ধ শ্রমিকরা গার্মেন্টের পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেননি। তারা কোনো ভাঙচুরও করেনি। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে দিনভর এ বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। পরে বিকেলে মালিক কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শ্রমিকরা তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

জানা যায়, উপজেলার শিল্পনগরী কাঁচপুরে অবস্থিত ওপেক্স ও সিনহা গ্রুপের শ্রমিকদের প্রতিমাসের বেতন পরবর্তী মাসের কর্মদিবসের সাতদিনের মধ্যে প্রদান করার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ ৩০ তারিখেও প্রদান করে না। এরূপ দু’মাসের বেতন ভাতা বকেয়া রয়ে যায়। এছাড়া শ্রমিকদের সার্ভিসের টাকা ছাড়া জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর, বেআইনি ভাবে লে-অফ দেয়াসহ ৭ দফা ও বিভিন্ন অনিয়ম করে ওপেক্স ও সিনহা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। 

শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও ৭ দাবিসহ সকল অনিয়ম বন্ধের দাবিতে কাঁচপুর ওপেক্স ও সিনহা গ্রুপের সকল শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজে যোগদান না করে গার্মেন্টের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় শ্রমিকরা বিক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় ও খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। এছাড়া শ্রমিকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে শ্রমিকরা তাদের ৭ দফা দাবি আদায়ের কথা জানান।

শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি হলো, অনিয়মভাবে লে-অফ মানি না, ১ থেকে ৭ কর্ম দিবসে বেতন দিতে হবে, মাতৃকালীন টাকা ছুটিতে যাওয়ার পূর্বে প্রদান করতে হবে, চাকরি ইস্তফা দেওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে সমস্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। যা বিগত ৬ বছরেও দেওয়া হয়নি, অকারণে মামলা দেওয়া চলবে না, চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে ও ফ্যাক্টরি চালাতে না পারলে ৪ মাসের বেতন ছুটির টাকাসহ এবং সার্ভিসের টাকা সম্পূর্ণ দিতে হবে।

এদিকে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এক পর্যায়ে গার্মেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ তারেক রহমান অফিস কক্ষে গিয়ে তাদের দাবি নিয়ে কথা বললে শ্রমিকরা ওই পরিচালককে আটকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তবে গার্মেন্ট শ্রমিকরা গার্মেন্টের পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিলেট মহাসড়কে অবস্থান করেনি। তারা কয়েকবার মহাসড়কে অবস্থান নিতে চাইলেও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

এদিকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের উত্তেজনার খবর পেয়ে কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কোনো শ্রমিককে তারা মহাসড়কে অবস্থান করতে দেয়নি।

শ্রমিক আলেয়া আক্তার, কামিনী, আমেনা বেগম, জমির হোসেন, মোতালেবসহ একাধিক শ্রমিকরা জানান, বেতন ভাতার সমস্যা গত ৫ বছর যাবৎ চলছে। তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে বেতন ভাতা নিতে হয়। আমাদের মাতৃত্বকালীন টাকা পরিশোধ করে না। রিজাইনের টাকা, ছুটির টাকা দেয় না। কিছু বললেই গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করে, অনেক শ্রমিককেও মামলা দেয়।

এ বিষয়ে গার্মেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ তারেক রহমান জানান, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে। তবে কোনো অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না।

শেখ ফরিদ/এমএএস