ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক মজিবর রহমান মারা গেছেন
অন্যের জন্য যিনি জীবনভর কাজ করেছেন, তুলে ধরেছেন দুঃখ-বেদনা ও দুর্দশার গল্প। সেই মানুষটাই যে এক সাগর দুঃখ ও বেদনা নিয়ে তিন দশক ধরে মফস্বলের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তা কয়জনে জানতো। যে মানুষটি অন্যের দুর্দশার গল্প ফুটিয়ে তোলেন তার ভেতরের অন্ধকারের গল্পই বা কয়জনে রাখতো। সংসারের টানাপড়েনেও ছুটেছেন অন্যের গল্প বুনতে। কে জানতো যে মানুষটি অন্যকে নিয়ে সংবাদের শিরোনাম করতেন আজ তিনি নিজেই সংবাদের শিরোনাম হবেন।
বলছি ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ সংবাদিক মজিবর রহমান শেখের কথা। ৩০ বছর ধরে সংবাদের পেছনে ছুটেছেন শহর থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামঞ্চলে। তার সেই ছুটে চলা প্রাণবন্ত দেহটি এখন অন্ধকার কবরে শয্যাশায়ী।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৬ জুন) ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। তিনি স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোনসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মরহুমের ভাগনে ৭১ টেলিভিশনের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু।
বিজ্ঞাপন
প্রবীণ সংবাদিক মজিবর রহমান শেখ জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের বাধমিছিল গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দৈনিক নবচেতনা, দৈনিক দাবানল, দৈনিক উষারবাণী ও স্থানীয় পত্রিকা আলোর কণ্ঠে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা পোস্টের সিনিয়র নিউজ এডিটর মাহাবুর আলম সোহাগের মামা। এই প্রবীণ সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংবাদিক মহলে। মৃত্যুর খবরে সহকর্মীরা ছুটে যান তার গ্রামের বাড়িতে।
আরও পড়ুন
মজিবর রহমান শেখের ভাগনে সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু ঢাকা পোস্টকে জানান, সাংবাদিক মজিবর রহমান শেখ দুই সপ্তাহ আগে ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন। এরপর তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে উন্নত চিকিৎসা না থাকায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা সুস্থ্যবোধ করলে বাসায় চলে আসেন। কিন্তু গতকাল রোববার (১৫ জুন) আবারও হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করেন। পরিবারের লোকজন ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে রংপুর ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মামাকে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি আরও বলেন, সকাল সাড়ে ১১টায় মরহুমের প্রথম জানাজা জেলা শহরের সালন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ আসর মামার গ্রামের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক করবস্থানে দাফন কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। জানাজায় জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে