যশোরের মণিরামপুরের কুয়াদা জামতলা মোড়ে সংগঠিত নগদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। শুরুতে এটিকে সংঘবদ্ধ ছিনতাই বলা হলেও তদন্তে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এ ঘটনায় নাটক সাজানোর অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে নগদের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন, একজন প্রাইভেটকার চালকসহ মোট ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশের জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। উদ্ধার করেছে ৩২ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা। তবে সে সময় ৫৫ লাখ টাকার কথা বলা হলেও ব্যাগে ৩৫ লাখ টাকা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপারের দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী এসব তথ্য জানান। 

আটককৃতরা হলেন- যশোর শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার ইউসুফ আলী সাজু (৩১), ঝিকরগাছার দিগদানা গ্রামের রনি গাজী (২৬), সুজন ইসলাম (৩৩), ইমাদুল গাজী (৪৬), নাসিম গাজী (১৯), একই উপজেলার খোষাল নগরের সাগর হোসেন (২৪) ও সোহেল রানা (২১)।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর হওয়ায় অপরাধীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। ঘটনার আগে ও পরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা এবং পুলিশি কলাকৌশল প্রয়োগ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ডিবিসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে।

ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে আসামি সাগর হোসেনকে ঝিকরগাছার খোষালনগর গ্রাম থেকে আটক ও মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়। এরপর সাগর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের আটক করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে নগদের টাকা বহনকারী প্রাইভেটকার চালক ইউসুফ আলী সাজুর যোগসাজসে ছিনতাইয়ের ঘটনা সংঘটিত হয়। আসামিদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক ঝিকরগাছার দিগদানা গ্রামের ইমদাদুল গাজীর (৪৬) হেফাজত থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫ শত টাকা এবং সুজন ইসলামের বাড়ি থেকে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ছিনতাইকৃত ৩২ লাখ ৫ হাজার ৫ শত টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাপাতি, একটি ধারালো চাকু ও টাকা বহনকারী একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

নগদের শাখা ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, ১৭ জুন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকার (নম্বর: ঢাকা মেট্রো গ ১৫৫৯২৩) কুয়াদা জামতলা মোড়ে পৌঁছালে হঠাৎ দুটি মোটরসাইকেলে আসা চারজন দুর্বৃত্ত গাড়িটির গতিরোধ করে এবং ৩৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

যশোর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল হক ভুঁইয়া জানান, বাকি টাকার সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এটি পরিকল্পিত একটি নাটক ছিল। পরিচিত কয়েকজনকে হেলমেট পরিয়ে ছিনতাইয়ের দৃশ্য সাজানো হয়। ১৭ জুন রাত ৯টার দিকে সন্দেহভাজন চারজনকে ডিবি হেফাজতে নেয়। এরপর ঘটনাটির গভীরে তদন্ত শুরু করে তারা। বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মণিরামপুর ও যশোর শহরের পোস্ট অফিস পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট ৭ জনকে আটক করা হয়।

আরএআর