ফাইলেরিয়া ও থ্যালাসেমিয়া নির্মূলের জন্য নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতালের কার্যক্রম আবারো নতুন আঙ্গিকে শুরু হতে যাচ্ছে। এ লক্ষে হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা, জমিদাতা ও পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি পরিচলনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুন) হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এ উপলক্ষে দায়িত্ব হস্তান্তর ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সমন্বয় পর্ষদের সভাপতি জিকো আহমেদ।

হাসপাতালটির নতুন সমন্বয় পর্ষদের সেবা উন্নয়ন ও আভ্যন্তরীণ নিরিক্ষক ফয়েজ আহমেদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফাইলেরিয়া হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ইন্সটিটিউট অফ এলার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউলোজি অফ বাংলাদেশ (আইএসিআইবি) এর মহাপরিচালক ও ফাইলেরিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রতিনিধি এবং আইএসিআইবি’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিপিডিএ’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডা. রাকিবুল ইসলাম তুহিন, সমন্বয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ও জমিদাতা মরহুম কবির উদ্দিন সর্দারের ছেলে গুলজার আহমেদ, সহ-সভাপতি ও কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার মমিনুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহমুদুল হক মিঠু এবং হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মরহুম ডা. সুরত আলী বাবুর ছেলে এবং হাসপাতালের বর্তমান এডমিন মোস্তাফিজুর রহমান মিলন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, ২০০২ সালে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন স্থানীয় মরহুম কবির উদ্দিনের ১৫ শতাংশ জমি দানের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বপ্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। জাপান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ সহায়তায় এখানে আরও একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। 

অত্যন্ত সুনিপুনভাবে এখানে ফাইলেরিয়ার চিকিৎসা প্রদান করায় অল্প দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলসহ দেশ বিদেশে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিরল ফাইলেরিয়া রোগাক্রান্ত মানুষজন স্বল্পমূল্যেই বিশ্বমানের সেবা পেয়ে উপকৃত হয় এবং ফাইলেরিয়া নির্মূলে কার্যকর সফলতা অর্জন হতে থাকে। 

২০১২ সাল পর্যন্ত এ হাসপাতালটি খুব ভালোভাবেই পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু এর পর প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে স্থানীয় পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে মুখ থুবরে পড়ে এর সার্বিক কার্যক্রম। 

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, জমিদাতা মরহুম কবির উদ্দিন সর্দারের বড় ছেলে ডা. সুরত আলী বাবু কোনো রকমে বহিঃর্বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি উন্নয়নের চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু সরকারি নানা জটিলতায় তা থেমে যায়। এমতাবস্থায় তিনি আইএসিআইবি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনরায় হাসপাতাল পরিচালনার জন্য সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। 

ডা. সুরত আলীর পরিবার ও স্থানীয় পরিচালনা কমিটি সমঝোতা করে আলোচনা করার পর ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয় পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এ পর্ষদ নতুন আঙ্গিকে হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য বদ্ধ পরিকর হয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 

এর মধ্যে হাসপাতালের অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নতুন জনবল নিয়োগসহ আধুনিক সরঞ্জাম ক্রয় করে সার্বিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

এটিকে জনসাধারণের সেবায় কাজে লাগানোর জন্য কার্যকর করার কোনো বিকল্প নেই। তাই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং তা গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্যই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।

মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এমএএস