সংবাদ পড়া হলো না মনির, ট্রাকচাপায় কাটা পড়ল দুই পা
বাংলাদেশ বেতার ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রে যাওয়ায় সময় ট্রাকচাপায় দুই পা হারিয়েছেন সংবাদ পাঠিকা ও নাট্যশিল্পী মুনিবুন ফেরদৌস মনি চৌধুরী (৩৫)। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরী হাট বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
আহত মুনিবুন ফেরদৌস মনি চৌধুরী সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনি চৌধুরী সকালে বাংলাদেশ বেতার ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রে সংবাদ পাঠের উদ্দেশ্যে তিনি তার ভাইয়ের মোটরসাইকেলে করে বেতারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সালন্দর চৌধুরীহাট এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়ে যান তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তে দ্রুতগতির একটি ট্রাক তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার আরেকটি পা কেটে ফেলতে হয়। বর্তমানে মনি চৌধুরী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় আহতের সহকর্মী ও স্বজনেরা সড়ক বিভাগকে দায়ী করছেন। তাদের মতে- সড়কে বড় বড় খানাখন্দ থাকায় এমন দুর্ঘটনা শিকার হয়েছেন মনি চৌধুরী।
এস. এম. জসিম উদ্দিন নামে এক সহকর্মী মুনিবুন ফেরদৌস মনি চৌধুরীকে নিয়ে তার নিজস্ব ফেসবুকে একটা আবেগঘন পোস্ট করেন।
তিনি সেখানে সড়ক বিভাগকে দায়ী করে লিখেন, কর্তৃপক্ষ আর কত দুর্ঘটনা আর অকাল মৃত্যু দেখতে চান? মুনিবুনের আজকে এই অবস্থার জন্য অবশ্যই সরকারের প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতাই দায়ী। কারণ দীর্ঘদিন থেকে মহাড়কের বিভিন্ন স্থানে ফুলে ফেঁপে উঠে সড়ক এবড়ো থেবড়ো হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেখানে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি সড়ক বিভাগকে প্রশ্ন রেখে লিখেন, আর কতগুলো অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এবং অকাল মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষ এ কাজের জন্য বরাদ্দ প্রদান করবেন?
বেতারের আরেক শিল্পী বলেন, আমরা প্রতিদিন সকালে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সড়ক দিয়ে বেতারে যাওয়া আসা করি। সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। বড় বড় গর্ত তারপরেও সড়কের লোকজন সংস্কার করে না। প্রায় দিনে কেউ না কেউ সড়কের এই গর্তে মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। সড়কের লোকেরা যদি মেরামত করতো তাহলে আজ আমাদের দীর্ঘদিনের সহকর্মী মনি আপার এমন করুণ দৃশ্য দেখতাম না। আজ মনি আপা সড়ক দুর্ঘটনা শিকার হয়েছে, কাল আমরা হতে পারি। তাই সড়কটি মেরামত জরুরি হয়ে উঠেছে।
ঠাকুরগাঁও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাফিউল ইসলাম মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু সালন্দর নয়, ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কয়েকটি সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে সংস্কারের জন্য জেলার বেশ কয়েকটি সড়ক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ার আলম খান মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকালে সালন্দর চৌধুরীহাট এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ঠাকুরগাঁও বেতারের এক সংবাদ পাঠিকা গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায় এবং ট্রাকটিকে আটক করা হয়।
রেদওয়ান মিলন/আরএআর