ভৈরব নদের তীরে তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী সবজি প্রক্রিয়াজাতকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে

যশোর সদর উপজেলার বারীনগর পাইকারি সবজির মোকামে এখন প্রতিটি বাঁধাকপি পাঁচ-সাত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় বাঁধাকপির দাম কমে গেছে

এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের ক্ষেত থেকে সরাসরি বাঁধাকপি কিনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সিঙ্গাপুরের বাজারে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার (০৬ ডিসেম্বর) সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মাঠ থেকে প্রথম চালানে ২০ হাজার কেজি বাঁধাকপি ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করা হয়। গড়ে এসব বাঁধাকপির দাম পড়েছে ছয় টাকা পিস। শেষ মুহূর্তে কম দাম পেলেও কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।

সিটি ইমপেক্স নামে ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের কাছ থেকে এসব বাঁধকপি কিনে প্রক্রিয়াজাত করে জাহাজের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার টেকসই কৃষির উন্নয়নে ‘সফল’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগস্থাপনে কাজ করা হচ্ছে।

বাঁধাকপি মুড়িয়ে নাইলনের জালের ব্যাগে ভরে কাভার্ডভ্যানের ভেতরে সাজানো হচ্ছে

বুধবার যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদের তীরে তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী সবজি প্রক্রিয়াজাতকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় যানবহনে করে গ্রামের মাঠ থেকে বাঁধাকপি কেটে ওই কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। শ্রমিকেরা তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাদা কাগজে একটা করে বাঁধাকপি মুড়িয়ে নাইলনের জালের ব্যাগে ভরে কাভার্ডভ্যানের ভেতরে সাজানো হচ্ছে।

রপ্তানিকারক শরিফুর রহমান বলেন, যশোর থেকে কাভার্ডভ্যানে করে বাঁধাকপি চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরে নেওয়া হবে। পরে বিশেষায়িত কন্টেইনারে ভরে জাহাজে করে তা সিঙ্গাপুর নৌ-বন্দরে পাঠানো হবে। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে চার থেকে পাঁচদিন সময় লেগে যাবে।

যশোর থেকে কাভার্ডভ্যানে করে বাঁধাকপি চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরে নেওয়া হবে

তিনি বলেন, এর আগে শুকনা খাদ্য ও আলুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছি। কিন্তু বাঁধাকপি প্রথমবারের মতো রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথম চালানে ২০ হাজার কেজি বাঁধাকপি পাঠানো হচ্ছে। পণ্যের গুণগত মান ঠিক থাকলে ও ক্রেতাদের মনরক্ষা করতে পারলে সপ্তাহে অন্তত দুটি চালান রপ্তানি করা যাবে। এতে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

৩৩ শতকের সাত বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছি। প্রথম দিনে রপ্তানির জন্যে তিন হাজার বাঁধাকপি বিক্রি করেছি। পাঁচ-সাত টাকা করে প্রতি কপির দাম পেয়েছি। স্থানীয় সবজির বাজারে এখন মানভেদে পাঁচ-সাত টাকা দরে প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি রপ্তানি হওয়ায় আমরা লাভবান হচ্ছি। এই ধারা অব্যাহত থাকুক।

শামসুল ইসলাম, শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক

কৃষক রেজাউল করিম বলেন, বাঁধকপির চাষ পদ্ধতি একটু ভিন্ন। বাঁধাকপি ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করা যায় না। কেঁচো সার ও জৈব বালাইনাশক দিয়ে চাষ করতে হয়। এজন্য এই সবজি নিরাপদ। আমরা আগে থেকে কৃষি বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে কৃষি বিভাগ আমাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছে। এবার ৪৮ হাজার বাঁধাকপি রোপণ করেছি। প্রথম দিন পাঁচ হাজার কপি বিক্রি করেছি। দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। লাভবান হচ্ছি।

সফল প্রকল্পের পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কষকের মাঠের সঙ্গে রপ্তানিকারকের সরাসরি সংযোগ স্থাপন হওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমেছে। বাজারে পণ্য তোলার পরে মালিকে খাজনা দিতে হতো। এখন দেওয়া লাগে না। সরাসরি কৃষক ও রপ্তানিকারক লাভবান হচ্ছেন। টেকসই এই কার্যক্রমে তত্ত্বাবধান করছে কৃষি বিভাগ।

বাঁধাকপি গাড়িতে তুলছেন শ্রমিকরা

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোর জেলায় মোট ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ রয়েছে। এর মধ্যে বাঁধাকপি রয়েছে ৭৫ হাজার হেক্টরে। যশোর জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বছরে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির সবজি থেকে যায়। যা  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ ও সফল প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চার মাসে যশোর থেকে ৭৪ হাজার ৩১৪ কেজি নিরাপদ সবজি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পটল, পেঁপে, চিচিঙা, ঝিঙে, বরবটি, লাউ, কাঁচা কলা, শিম ও গোল বেগুন।

এএম