বিনা বিচারে ৩০ বছর কারাগারে, অবশেষে মুক্তি পেলেন কনু মিয়া
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রাম গ্রামের কনু মিয়া ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন বিনা বিচারে কারাগারে কাটানোর পর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মুক্তি পেয়েছেন। মানসিক রোগে আক্রান্ত এই ব্যক্তি বিচার না পেয়ে দীর্ঘ দিন কারাগারে বন্দি ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৫ মে কনু মিয়া নিজের মাকে কোদাল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। এই অভিযোগে গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় কানু মিয়ার ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলা চলাকালে কানু মিয়া মানুসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২০০৩ সালে আদালত এক আদেশে বলেন, কানু মিয়া সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এরপর এভাবে বিচারহীনভাবে তিনি কারাগারে ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন বিষয়টি নজরে এনে আইনগত সহায়তার উদ্যোগ নেন। পরে হবিগঞ্জের লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী এম এ মজিদ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কনু মিয়ার জামিন আবেদন করলে সোমবার (১৪ জুলাই) জামিন মঞ্জুর হয়।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে কনু মিয়ার আইনজীবী এম এ মজিদ বলেন, গত কিছুদিন আগে হবিগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিচার না পেয়েই কারাগারে রয়েছেন। পরে আমরা কারাগারে যোগাযোগ করে কনু মিয়ার ফাইল সংগ্রহ করি এবং তার মামলার বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখি। আমরা কানু মিয়ার বড় দুই ভাই মামলার বাদী মুনু মিয়া ও নাসু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন দেখি, ২০০৩ সালে আদালতের এক আদেশে বলা হয়েছিল তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এরপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে বিষয়টি আমি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নজরে আনি এবং কনু মিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করি। আদালত বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে মুক্ত করি।
হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. মনির চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯৯৫ সালে কারাগারে আসেন কানু মিয়া। দীর্ঘ ৩০ বছর ২ মাস ১৬ দিন পর আদালতের নির্দেশে তিনি মুক্তি পেলেন। সম্প্রতি লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্ব পায় এবং কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার ফলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।
মাসুদ আহমদ রনি/এএমকে