অভিযুক্ত শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর শিল্পী খাতুন এবং গাড়ির চালক মজিবর রহমান মোল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর নকল করে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতের ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ ঘটনায় সদর উপজেলা ইউএনও মারিয়া হক অভিযুক্ত দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।

এরই মধ্যে সরকারী অর্থ আত্মসাতের দায় স্বীকার করে আত্মসাতকৃত অর্থের মধ্যে ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন শিল্পী খাতুন। তবে বাকি ২ লক্ষ ৯০ হাজার ৩০ টাকা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি।

অভিযুক্ত গাড়ি চালক মজিবর রহমান মোল্লা বলেন, “আমার বেতনের একাউন্টে ৫ দফায় মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা এসেছে। আমার একাউন্টে টাকা আসার পর শিল্পী খাতুন আমাকে টাকাগুলো উত্তোলন করে তাকে দিতে বলে। আমিও তাকে টাকাগুলো দিয়ে দেই।গত ১৩জুলাই ইউএনও স্যার আমাকে ডেকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আমি স্যারকে বলি আমার একাউন্টে টাকা ঢুকেছিল, আমি টাকা তুলে শিল্পীকে দিয়েছি। তখন ইউএনও স্যার শিল্পীকে ডাকলে শিল্পী স্যারের পাঁ জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলে যে তার ভুল হয়েছে। স্যারের পাঁ ধরে সে মাফও চায়।”

ইউএনও’র জারি করা অভিযোগনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা একে অপরের যোগসাজশে চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তসরুফ বা প্রতারণা কার্যক্রম করে আসছেন। জুলাইয়ের ব্যাংক হিসাবের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়— ইউএনও স্বাক্ষর নকল করে শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তাদের ব্যাংক একাউন্টে বিভিন্ন অংকের টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন। তারা ২০২৪ সালের ২ডিসেম্বর থেকে চলতি মাসের ৭জুলাই পর্যন্ত জালিয়াতির মাধ্যমে মোট ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাত করেছেন।

নোটিশে আত্মসাতকৃত সমূদয় অর্থ আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা শিরোনামে চলতি হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সদর উপজেলা পরিষদে শিল্পী খাতুনের অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে শিল্পী খাতুনের বাসায় গেলে তার স্বামী জানান তিনি খুব অসুস্থ, কথা বলতে পারবেন না। এক পর্যায়ে শিল্পী খাতুন সাংবাদিকদের তার কক্ষে ডেকে কান্নাকাটি করতে করতে বলেন, “আমি খুবই অসুস্থ, কথা বলতে পারছি না। গাড়ি চালক মজিবরের বুদ্ধিতে আমি ভুল করেছি। এখন ভুল স্বীকার করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। এরই মধ্যে আমি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ইউএনও স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা শিরোনামে চলতি হিসাব নম্বরে জমা দিয়ে দিয়েছি। অবশিষ্ট ২ লাখ ৯০ হাজার ৩০ টাকা মজিবরের জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।”

ইউএনও মারিয়া হক বলেন, এই অর্থ বছরের শেষের দিকে আমি অফিসের কিছু কাগজপত্রে বিচ্যুতি লক্ষ্য করি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে যে বা যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত শেষে সাংবাদিকদেরও জানানো হবে।

এদিকে গাড়ির চালক মো. মজিবর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কম দেখিয়ে এবং জাল কাগজপত্র দিয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের গাড়ি চালক পদে নিয়োগ প্রাপ্তির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমটিআই