বরগুনায় আ.লীগের সাবেক তিন এমপিসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বরগুনায় জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে সাবেক তিন সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ২৩১ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ফের মামলা দায়ের হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) বরগুনা অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করেন। পরে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে এস এম নইমুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ১৭ মার্চের দেখানো ঘটনার ওই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১৫৮ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত আসামি করা হয়।
দায়েরকৃত মামলায় বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন, একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারজানা সবুর রুমকি, সহসভাপতি মো. মোতালেব হোসেন মৃধা, সাবেক বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির, বরগুনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ ওলি উল্লাহ অলি, সাবেক জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাবু, বরগুনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান বাহাদুরসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ২৩১ জন নেতাকর্মীকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ মে বিকেলে বরগুনা পৌরশহরের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় অভিযুক্তরা একত্রিত হয়ে রামদা, ছেনা, চাইনিজ কুঠার ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিএনপি কার্যালয়ের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। পরে তাদের সঙ্গে থাকা হাতবোমা, চকলেটবোমা, ককটেল ইত্যাদি বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা চালান। এ ছাড়া কার্যালয়ে উপস্থিত বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং গুলি করে গুরুতর আহত করেন।
আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিশ্চিহ্ন করতে রামদা, লোহার রড, বগি দা, ডেগার, হেমার, হাতুরি, জিআই পাইপ, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন প্রাণনাশক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসেন। জয়বাংলা স্লোগানের সঙ্গে ‘একটা-দুইটা বিএনপি ধর, সকাল-বিকাল নাস্তা কর’ এমন আরও বিভিন্ন অশালীন ভাষায় স্লোগান দিয়ে বিএনপি অফিস কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া কার্যালয়ে থাকা জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি নষ্ট করেন তারা। পরে কার্যালয়ের সামনে থাকা বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল পিটিয়ে ভাঙচুরসহ আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযুক্তরা ১০টি মোটরসাইকেল নিয়া যায় বলেও উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তরা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট হওয়ায় তৎকালীন প্রশাসনকে এ ঘটনা জানালেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পরে আমরা বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। এ কারণেই বরগুনা বিএনপি অফিস কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াকুব হোসাইন বলেন, আদালতের আদেশ এখনো পাইনি। আদেশ পেলে সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো. আব্দুল আলীম/এএমকে