জিসান

ব্যবধান মাত্র দুইদিনের। দিনমজুর মোহন মিয়া তার ক্যানসার আক্রান্ত ছেলের করোনা পরীক্ষা করিয়ে এখন ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি। গত ৫ জুন মোহন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছেলের করোনা পরীক্ষা করিয়ে ফলাফল পেয়েছিলেন পজিটিভ। করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা সহানুভূতির বিপরীতে উল্টো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।

দিশেহারা মোহন এরপর গত ৭ জুন ছেলের নমুনা দিয়েছিলেন শহরের খানপুর ৩শ শয্যা কোভিড হাসপাতালে। সেখানকার পরীক্ষায় ক্যানসার আক্রান্ত ছেলের ফলাফল এসেছে নেগেটিভ। মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে দুই রকম ফলাফল নিয়ে এখন তিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে দিনমজুর মোহন মিয়া। 

কথা হয় দিনমজুর মোহন মিয়ার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোহন ঢাকা পোস্টকে জানান, তার বাড়ি ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নে। নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সুতার বস্তা লোড-আনলোড করে স্বল্প আয় দিয়ে তিন সদস্যের সংসার চালান তিনি। ১৮ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে জিসান একদিন পড়ালেখা করে সংসারের দুঃখ ঘুচাবে- এটাই আশা ছিল তার। কিন্তু সেই ছেলের মাথায় টিউমার ধরা পড়ে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল। 

টিউমার শনাক্ত হওয়ার খবরে ঘুম ছিল না বাবা-মায়ের চোখে। সহকর্মী, প্রতিবেশী আর আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার-দেনা করে গত ২৫ এপ্রিল সেই টিউমার অপারেশন করা হয়। কিন্তু এখানেই যেন দুঃখের শেষ ছিল না দিনমজুর মোহন মিয়ার। টিউমারটি নিরীক্ষণে (বায়োপসি টেস্ট) ক্যানসার ধরা পড়ে তরুণ জিসানের। জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমেই করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। গত ৫ জুন নারায়ণগঞ্জের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা দেওয়া হয় তার করোনা পরীক্ষার জন্য। ২ হাজার ৩০০ টাকা ফি দেওয়ার পর গত ৬ জুন রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ। 

মোহন মিয়া বলেন, যখন করোনা পজিটিভ শুনেছি তখন থেকে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়ি। করোনার কথা শুনে স্বজন বা প্রতিবেশীরা একটি বারের জন্যও সহানুভূতি পর্যন্ত দেখায়নি। রাস্তার এক পাশে দেখলে অন্য পাশে চলে গেছে। কিন্তু আমার মন সায় দেয়নি। পপুলারের রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ হলে গত ৭ জুন ১০০ টাকা দিয়ে খানপুরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে আবারও করোনার নমুনা দেই। ৮ জুন করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। আমি এখন কী করব। কার রিপোর্ট বিশ্বাস করবো। 

তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে যে চিকিৎসার জন্য করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে, ভুল রিপোর্টের ফলে সেই চিকিৎসাই এখন পর্যন্ত নিতে পারিনি। হাসপাতালে গেলে বুঝা যাবে, ভুল রিপোর্টের মাশুল কত দিন দিতে হবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, এক-দুই দিনের ব্যবধানে কখনোই করোনা নেগেটিভ হওয়ার কথা না। কোনো একটি রিপোর্টে ভুল রয়েছে। 

বিষয়টি জানতে নারায়ণগঞ্জ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম স্বপনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, কারটা ভুল আর কারটা সঠিক, সেটা আমি বলতে পারব না। আমাদের রেকর্ড দেখে বলতে হবে। তার জন্য রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। তারপরেই বলতে পারব ঘটনা কী। এ সময় রিপোর্টের ছবি পাঠাবো কিনা- জানতে চাইলে মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন রেখে দেন  শহীদুল ইসলাম স্বপন। 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার বলেন, আমাদের হাসপাতালে যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট রয়েছে। আমাদের পিসিআর ল্যাবের রিপোর্ট ভুল হয়েছে কখনও এমনটি শোনা যায়নি গত দেড় বছরে। এছাড়া কোনো রিপোর্ট সন্দেহ হলে একাধিকবার টেস্ট করে রিপোর্ট দেওয়া হয়। তাই খানপুরের পরীক্ষার রিপোর্টই গ্রহণযোগ্য।

আরএআর