নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ের বকেয়া ভাড়া চাওয়ায় মো. জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া (৫৭) নামে এক দোকান মালিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া ওই ইউনিয়নের মৃত তালেব আলী ভূঁইয়ার ছেলে।

নিহতের পরিবারের দাবি, বিএনপির পার্টি অফিস হিসেবে ভাড়া দেওয়া দোকানের বকেয়া চাওয়ায় মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোতা মেম্বারসহ ১০-১২ জন মিলে জাহাঙ্গীরকে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।

নিহত জাহাঙ্গীরের ছেলে রাসেল বলেন, সকাল ৯টার দিকে আমার বাবা বকেয়া ভাড়া চাইতে গেলে তোতা মেম্বার (৭০), তার ছেলে খোকন (৩৫), রাসেল (৩০), বেণু হাজীর ছেলে আলম (৪৫) ও সাদ্দামসহ ছয়-সাতজন মিলে তাকে ধরে পার্টি অফিসে নিয়ে যান এবং সেখানে প্রচুর মারধর করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর বিএনপির কার্যালয় হিসেবে দোকানটি ভাড়া নেন তোতা মেম্বার। এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের অনুসারীদের অফিস হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, সকালে বকেয়া ১০ হাজার টাকা ভাড়া চাইতে গেলে তোতা মেম্বার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘বিএনপির অফিসের আবার কীসের ভাড়া?’ একপর্যায়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যে দোকান মালিক জাহাঙ্গীর তোতা মেম্বারকে ধাক্কা দিলে, তার অনুসারীরা তাকে পার্টি অফিসে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।

আড়াইহাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, একটি দোকানের ভাড়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে একজন গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমরা ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তদন্ত করে দলের যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আমরা আইনি ব্যবস্থার জন্যও সুপারিশ করব। ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাসুম শিকারি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ইউনিয়ন বিএনপির অফিস বাজারের প্রবেশমুখেই। তোতা প্রধান বাড়ির সামনে আরেকটা অফিস খুলেছেন। তিনি মূলত বিএনপির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের সাথে রাজনীতি করতো। সুমন আর তাদের লোকজন সেই অফিসে যাতায়াত করতো।

আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর জেনেছি, বিএনপির নামে একটি কার্যালয় করা হয়েছিল, যেটার ভাড়া না দিয়ে ঘুরাচ্ছিল। পরে লোকটাকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটা খুবই মর্মান্তিক।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বলে অভিযোগ পাচ্ছি, সেই তোতা মেম্বার ও তার পরিবারের লোকজন বর্তমানে বিএনপির কোনো পদে নেই। তোতা নিজে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং হত্যাকারী যেই হোক, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার চাই।

 

মেহেদী হাসান সৈকত/আরএআর