ইন্টারনেট বন্ধেও দমেনি ময়মনসিংহের ছাত্র-জনতা
গত বছর আন্দোলন চলাকালীন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলে পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যায় -ময়মনসিংহ
গেল বছর ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে তৎকালীন সরকার বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল সারাদেশের ইন্টারনেট সংযোগ। এতে প্রযুক্তির বিশ্বায়নে যোগাযোগ রক্ষায় অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছিল আন্দোলনকারিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সাধারণ মানুষ। কিন্তু সংযোগ বন্ধ করেও রাজপথে দমানো যায়নি ময়মনসিংহের লাখো ছাত্র জনতাকে।
সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে ময়মনসিংহের আন্দোলন কর্মীদের সঙ্গে গেল বছরের উত্তাল ৫ আগস্টের স্মৃতিচারণে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
বিজ্ঞাপন
স্মৃতিচারণে বলা হয়, লাগামহীন দমন নিপীড়নের মধ্যেও সারাদেশে আন্দোলনে গতি বাড়তে থাকায় গত বছরের ১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। এতে কাজ না হওয়ায় পরদিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। অচল করে দেওয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু এতে কাজ হয়নি।
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জানান, আন্দোলনের সময় যখন সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়, তখন যোগাযোগের জন্য ভিপিএনই ছিল একমাত্র কার্যকর মাধ্যম। তবে সকলের কাছে পৌঁছায়নি বা অনেক জায়গায় সেটিও কার্যকর ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আমরা কয়েকটি বিকল্প কৌশল গ্রহণ করি। এর মধ্যে ছিল প্রতিদিনের কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই পরের দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা, ফোন কল ও টেক্সট মেসেজ ব্যবহার করে কর্মসূচি ও বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হতো। স্থানভেদে মসজিদভিত্তিক প্রচারনায় নামাজের পর ইমাম, মুয়াজ্জিন বা স্থানীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে মসজিদে মসজিদে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া। এটি ছিল গ্রামীণ ও শহরতলির মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানোর অত্যন্ত কার্যকর মাধ্যম। এই পদক্ষেপগুলো আমাদের আন্দোলনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাখে এবং মানুষের মধ্যে আস্থা জোগায়। ফলে সরকারি দমন-পীড়নের মধ্যেও ছাত্র জনতার বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলার প্রধান সমন্বয়ক মো: আশিকুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করে দমন পীড়ন চালিয়ে সরকার ছাত্র জনতাকে রুখে দিতে চেয়েছিল। এতে ছাত্র জনতা আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে রাজপথে নেমে আসে। আশা করছি বর্তমান সরকার ইন্টারনেটে বন্ধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ওই সময় সারাদেশের খবর পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হয় পত্রিকা। ওই সময় পত্রিকার স্টলগুলো পাঠকদের ভীড় লেগে থাকত । মূহুর্তেই পত্রিকার কপি বিক্রি শেষ হয়ে যেত বলে জানান নগরীর গাঙ্গিনাপাড় পত্রিকা স্টলের হকার মো: হেলু মিয়া ও রাজা।
তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই সময়ের মত পত্রিকা এখন আর বিক্রি করতে পারি না। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমাদের দোকানে এসে মানুষ ভীড় করে পত্রিকা পড়তো। ওইটা একটা অন্যরকম সময় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় রেডিও খবরের গুরুত্বের অনেক গল্প শুনেছি, দেখছি ছায়া সিনেমায়। আর ২৪ সালে দেখছি পাঠকের কাছে পত্রিকার গুরুত্ব।
প্রসঙ্গত, এরপর ২৮ জুলাই তৎকালীন সরকার ইন্টারনেট চালু করলেও আবার ৫ আগস্ট কয়েক ঘণ্টার জন্য মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড উভয় ইন্টারনেট সেবাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে দুপুর ২টার পর ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল হয়।
মো: আমান উল্লাহ আকন্দ/এমটিআই