‘আমার বোন পড়ে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে দেখছে, কেউ ভিডিও করছে’
আমার বোন পড়ে আছে, কিছু লোক দাঁড়িয়ে দেখছে, কেউ ভিডিও করছে। আমার বোন যদি একটু আগে পৌঁছাত, হয়তো বেঁচে যেত। মানুষের প্রতি ওপার কৃতজ্ঞতা। আপনাদের এই রকম দুঃখ উপরওয়ালা যেন না দেন।
এই হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন স্নেহা চক্রবর্তীর বড় ভাই রাজ চক্রবর্তী। বোনের নিথর দেহ পড়ে আছে, আর আশপাশে মানুষ দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও করছিল-এই দৃশ্যের স্মৃতি তাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন-সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী (১৮), সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আফসানা খুশী (১৭) এবং সুনামগঞ্জ শহরের আলীপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫০)।
জানা যায়, আফসানা ও স্নেহা ক্লাস শেষে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে সিএনজিতে করে শহরে ফিরছিলেন। পথেই সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস ওভারট্রেক করতে গিয়ে সিএনজিটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আফসানা খুশী ও শফিকুল ইসলামের। গুরুতর আহত স্নেহা চক্রবর্তীর মৃত্যু হয় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় আরও দুইজন আহত হন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
রাজ চক্রবর্তী বলেন, আমি যখন গিয়ে পৌঁছাই তখনও স্নেহার গায়ে একটু উষ্ণতা ছিল। যদি একটু আগে যেতে পারতাম, কিংবা কেউ সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেত, হয়তো স্নেহা বেঁচে যেত। এখন শুধু আফসোসই রয়ে গেল।
স্নেহা ও খুশী দুজনেই ছিলেন মেধাবী, স্বপ্নবাজ তরুণী। শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, যারা মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিল, আজ তাদেরই লাশ বাড়ি ফিরছে।
দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইনস্পেক্টর মো. হানিফ মিয়া বলেন, বাস চালক নিয়ম লঙ্ঘন করে ওভারটেক করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও জানান, বাস ও সিএনজিকে জব্দ করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তামিম রায়হান/এমএএস