সন্তানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘জুলাই শহীদ’ পরিচয়ে অর্থ সংগ্রহ ও আত্মসাতের অভিযোগ তুলে এক বাবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে চাটখিল উপজেলার শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন তারা। এর আগে গত ২৭ মার্চ চাটখিল থানায় শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, লুট করা অস্ত্র ব্যবহার করে আত্মঘাতি হওয়া ইমতিয়াজের নামে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট বাতিল করা হোক।

আবেদনে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ইমতিয়াজ হোসেন একজন কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে তিনি চাটখিল থানায় অনধিকার প্রবেশ করে অস্ত্র লুট করেন। লুট করা অস্ত্র কোমরে রেখে পালানোর সময় দুর্ঘটনাবশত নিজেই গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে।

তারা আরও বলেন, ইমতিয়াজের আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ, ছবি বা ভিডিও এখন পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি আন্দোলনের সময় তার উপস্থিতি সম্পর্কেও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান ছেলের মৃত্যুকে ‘জুলাই শহীদ’ পরিচয়ে বিভিন্নস্থানে প্রচার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং সেই সূত্রে অর্থ সংগ্রহ করে তা আত্মসাৎ করছেন। এছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রকৃত যোদ্ধাদের মামলায় জড়ানো, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মামলা ব্যবস্থার অপব্যবহারের সঙ্গেও তিনি যুক্ত, এমন অভিযোগ রয়েছে।

তারা আবেদনপত্রে দাবি করেন, হাবিবুর রহমান কোনো সরকারি বা বেসরকারি উৎস যেমন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন কিংবা অন্য কোনো তহবিল থেকে যদি কোনোভাবে অর্থ গ্রহণ করে থাকেন এবং তা যদি অপব্যবহার বা আত্মসাতের প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

আবেদনে স্বাক্ষরকারী নোয়াখালী সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমতিয়াজের মৃত্যুকে শহীদ বানিয়ে তার বাবা হাবিবুর রহমান গেজেটভুক্তির মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আদায় করেছেন। মামলার ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়সহ ৭০-৮০ লাখ টাকা ও 'জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন' থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বাবার ‘জুলাই বাণিজ্য’ নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলে, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেব।

এ বিষয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী গোলাপ হোসেন ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেভাবে কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ইমতিয়াজও আন্দোলনে অংশ না নিয়েও ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। এটি শহীদদের অপমান এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার। আমরা এর কঠোর তদন্ত ও শাস্তি দাবি করছি। আমরা শেষ দেখে ছাড়বো। আগামীতে গণস্বাক্ষর, থানা ও উপজেলা প্রশাসন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমরা চাই সত্য প্রকাশ হোক। 

তাহা ইয়াসিন নামের আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমতিয়াজের বাবা এখনও গলাবাজি করে যাচ্ছেন। সরকার তার সকল সুযোগ সুবিধা স্থগিত করে রাখলেও তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শহীদের বাবা হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত চালাক লোক। জুলাই বাণিজ্যের এমন নির্মম উদাহরণ থাকলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না প্রশাসন। আমরা চাই প্রশাসন তদন্ত করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমতিয়াজের বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে, রাষ্ট্রীয় সকল কর্মসূচি থেকেও তার পরিবারকে বিরত রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ ও আওয়ামী সরকার পতনের পর চাটখিল থানায় হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। ওই সময় হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ থানা থেকে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই গুলিতে আত্মঘাতি হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

হাসিব আল আমিন/এমএএস