কী অন্যায় করেছিল আমার ছেলে— প্রশ্ন নিহত সাংবাদিক তুহিনের বাবার
সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) হত্যার ঘটনায় তার বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল এখন পাগলপ্রায়। ছেলের মৃত্যুর খবরে ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৬নং সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভাটিপাড়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান তুহিন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় তুহিনের পরিবারের খোঁজ নিতে তাদের বাড়িতে যান ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক। এ সময় তার বাবা হাসান জামাল কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং আহাজারি করতে থাকেন। জানতে চান তার ছেলের কী অপরাধ, কেন তাকে হত্যা করা হলো?
বিজ্ঞাপন
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো? আমি কারো ক্ষতি চাই না, তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’
ছেলের শোকে কাতর হাসান জামাল বলেন, ‘গত পরশু আমার ছেলে আমার জন্য ওষুধ কিনতে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছে। এখন কে আমার জন্য ওষুধের টাকা পাঠাবে। কেন ছেলেটাকে তারা মেরে ফেলল?’
বিজ্ঞাপন
ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে ভাটিপাড়া বাবার বাড়িতে ছুটে এসেছেন বড় বোন রত্না বেগমসহ অন্য স্বজনেরা। বৃদ্ধা মা সাহাবিয়া খাতুন বকুলকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করতে করতে রত্না বলেন, আমার ভাই আমার কোলে বড় হয়েছে। কেন আমার ভাইকে মানুষের হাতে প্রাণ দিতে হলো। সে তো কারো ক্ষতি করেনি।
তুহিনের মা সাহাবিয়া খাতুন বকুল বলেন, গত পরশু আমার ছেলে মোবাইলে কল করে আমার দুই নাতির সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছে। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। আমার বাবারে কারা মারল, কী দোষ তার?
তুহিনের বড় ভাইয়ের স্ত্রী নূরুন্নাহার বেগম বলেন, যারা তুহিনকে মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই। তারা মানুষ না, অমানুষ। এমন করে কেউ কোনো মানুষকে মারতে পারে না।
ভাগ্নে আবু রায়হান বলেন, মামা (তুহিন) ব্যবসার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে সাংবাদিকতা করতেন। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা তার খুনিদের ফাঁসি চাই।
সূত্র জানায়, তুহিনের বড় ভাই জসিম উদ্দিন গাজীপুর চৌরাস্তায় ব্যবসা করতেন। লেখাপড়া শেষ করে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন তুহিন। ২০০৯ সালে বড় ভাই জসিম ক্যন্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তুহিন ও তার আরেক ভাই সেলিম একসঙ্গে গাজীপুরেই বসবাস শুরু করেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের আরেক ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারের টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং এক ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে থাকেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে কেবল বৃদ্ধ বাবা-মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাদের দেখভাল করে আসছিলেন।
তুহিনের মরদেহ এখন গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় রয়েছে। সেখানে আজ বাদ জুমা তার প্রথম জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হবে। এরপর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরকে/জেএস