‘বিচারহীনতার সংস্কৃতিই সাংবাদিক হত্যার অন্যতম কারণ’
রংপুরের সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, অতীতে গড়ে ওঠা ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’-ই সাংবাদিক হত্যা, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের অন্যতম কারণ। তারা অভিযোগ করছেন, বিগত সময়ের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত দেড় মাসে দুই সাংবাদিক হত্যাসহ ছয় মাসে সাংবাদিক নির্যাতন, মামলা-হামলা ও নিপীড়নের ১৯৬টি ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ জনসম্মুখে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে দুর্বৃত্তরা প্রমাণ করেছে এ দেশে কেউই নিরাপদ নয়।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। গাজীপুরে আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের দাবিতে এই মানববন্ধন সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজ।
বিজ্ঞাপন
এতে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মানিক, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি সাঈদ আজিজ চৌধুরী, সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন মখদূমী, প্রেসক্লাব কাউনিয়ার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, পীরগাছা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম, রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব পলাশ কান্তি নাগ, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, টিসিএ রংপুরের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডেমি ও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আতিক হাসান।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছিলেন। আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে ৩০ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন, দেড় হাজার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরের তাহির জামান প্রিয়-সহ নিহত ৬ সাংবাদিকের সকলেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত সাংবাদিক হত্যার বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এমনকি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত দিতে পারেনি। এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ এ পর্যন্ত ১১৯ বার পেছানো হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
বক্তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সাংবাদিক হত্যা, খুন, গুম, হামলা-মামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গত ১৬ বছরে রাজধানীসহ সারা দেশে ১৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। রক্তস্নাত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গণমাধ্যমকে এখনো যারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দুই হাজার লাশের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখনও হত্যা, নির্যাতন বন্ধ হয়নি। গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার দায় সরকার এড়াতে পারে না। তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাসহ সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
মানববন্ধনে রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টিসিএ রংপুর, অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাব, সদর উপজেলা প্রেসক্লাব, পীরগাছা প্রেসক্লাব, প্রেসক্লাব কাউনিয়া, সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে খুন হয়েছেন সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন। এক দল দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে দা, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আগের দিন বুধবার বিকেলে নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় বেদম মারধরের শিকার হন আরেক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। প্রকাশ্যে টেনেহিঁচড়ে, পিটিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে তার পা থেঁতলে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআর/এএমকে