জামালপুরে বন্যহাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি-ফসলি জামি
জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় বন্যহাতি প্রবেশ করে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত কয়েকটি দলে বিভক্ত শতাধিক হাতির পাল এসব এলাকায় প্রবেশ করে অন্তত ২৫টি গ্রামে বন্যহাতির তাণ্ডব চালায়। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ওই এলাকায় বন্য হাতির দেখা মিলেছে। বন্যহাতির তাণ্ডবের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক আর উতকণ্ঠা বিরাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহ বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত বকশীগঞ্জ, শ্রীবরদী ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে ৭০ জন নিহত হয়েছে ও প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া মানুষের হাতে মারা পড়েছে ৩৯টি হাতি।
স্থনাীয় সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার হাতিবেড়কোনা, শোমনাথপাড়া, সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, দিঘলাকোনা, লাউচাপড়া, চন্দ্রপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কর্নঝোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গা জল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা, পাঁচমেঘাদলসহ সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি এসব গ্রামে বাঙালি, গারো, কোচ ও হাজংসহ অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। কয়েকদিন থেকে টানা পাহাড়ি হাতির তাণ্ডবে ওই এলাকার ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে হাতির আক্রমণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক জমি চাষাবাদ না করে ফাঁকা ফেলে রাখতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের।
জামলপুরে জেলার উত্তরে সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গহীন বনাঞ্চলের হাতির দল প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে চলে আসে। এ সময় তারা ধান, কলা, আদা, হলুদসহ মৌসুমী ফসল খেয়ে ও বাগানের গাছপালা ভেঙে ফেলে। কিছু এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
দিঘলাকোনা গ্রামের পিটিসং সাংমা বলেন, রাতভর মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে আর বাঁশের ফটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তারপরও কিছু হাতি গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করেছে। আমরা কলা, আদা, হলুদ ও ধান চাষ করি। হাতির পাল এলে শুধু ফসলই নয়, অনেক সময় ঘরবাড়িতেও হামলা চালায়।
লাউচাপড়া পাহাড়ি এলাকার শামছুল হুদা বলেন, প্রতি বছর বন্যহাতির কারণে আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে হাতিরা লোকালয়ে চলে আসে। তখনই ফসল ও গাছপালা নষ্ট হয়।
বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল জানান, এ বছর কয়েকদিন থেকে হাতির আক্রমণ এই অঞ্চলের মানুষ বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বন্যহাতিগুলো কখন, কোথায় আক্রমণ করবে তাও বলা যায় না। স্থায়ী সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম বন্যহাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মুত্তাছিম বিল্লাহ/আরকে