দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় তদন্তে নেমেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গঠিত চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আবুল ইসলাম।

এর আগে বেনাপোলে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৩ আগস্ট) থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে। একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিজস্ব তদন্ত দল ও অডিট বিভাগকে নিয়ে মেনিফেস্ট যাচাই, পণ্য চালান বিশ্লেষণ এবং কাস্টমস কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জাল ও পুনঃব্যবহৃত মেনিফেস্ট ব্যবহার করে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য খালাস করা হচ্ছিল। এর ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ক্ষতির মুখে পড়ছেন বৈধ ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে আছেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল ইসলাম। অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম-সচিব মো. ফিরোজ আহমেদ, যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা এবং সিনিয়র সহকারী সচিব সুলতানা সালেহা সুমি (সদস্য সচিব)।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একাধিক মেনিফেস্ট পুনঃব্যবহারের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে উচ্চ শুল্কের পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে এ অনিয়ম বেশি ধরা পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাস্টমস ও বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, আমরা নিয়ম মেনে শুল্ক পরিশোধ করলেও সময়মতো পণ্য ছাড় পাই না। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি।

অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু অভিযোগ করে বলেন, চোরাই পথে আসা পণ্য কম দামে বিক্রি হওয়ায় বৈধ ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকলে বৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

যদিও কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আবুল ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত দলের এক সদস্য বলেন, রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের রাজস্ব সুরক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

রেজওয়ান বাপ্পী/আরএআর