মৌলিক সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না : গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ডিসেম্বর মাসে সম্ভাব্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল হিসেবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই সরকারকে বলেছি, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে এ দেশের জনগণ সে নির্বাচন মেনে নেবে না। সুতরাং নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ শেষে মালতিয়া গ্রামের ধানের চাতালে অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, আমাদের মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই মহিলা। আগামী নির্বাচনে আপনারা ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লার গণজোয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে এখন থেকে পাড়া-মহল্লায় কমিটি করে প্রতিটি মহিলা ভোটারের কাছে আমার সালাম পৌঁছে দেবেন এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আপনারা এ ধারা অব্যাহত রাখবেন।
ঘোষিত জুলাই সনদের সমালোচনা করে গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই সনদে ৪৭ সালের অবদানকে ছোট করা হয়েছে, আলেম-ওলামাদের ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে, হেফাজতের আত্মদানের কথা উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং এই ত্রুটিপূর্ণ সনদ নয়, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ৪৭ থেকে শুরু করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যার যতটুকু অবদান আছে ততটুকু নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদে উল্লেখ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার বিপ্লবী জনগণকে কোনোভাবে দাবিয়ে রাখতে পারে না। তারা (আওয়ামী লীগ) তেমনি বাংলাদেশের বিপ্লবী জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন, ত্যাগ এবং কুরবানি– সবকিছুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের যুব সমাজের নেতৃত্বে তারা গদি ছাড়তেই শুধু বাধ্য হয়, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা বলি, এ দেশের সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নাগরিক যারা, তারা কখনোই দেশ থেকে পালানোর চিন্তাও করেন না। যারা দেশকে ভালোবাসেন, তারা দেশ ছেড়ে পালান না। যারা দেশকে ভালোবাসেন, তারা কানাডা, মালয়েশিয়ায় বেগমপাড়া গড়ে তোলেন না। যারা দেশকে ভালোবাসেন, তারা দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেন না। যারা দেশকে ভালোবাসেন, তারা জনগণের করের টাকায় কেনা অস্ত্র আর গুলি জনগণের বুকে তাক করেন না। তারা সবই করেছেন। ফ্যাসিস্টের শিরোমণি চেয়েছিলেন ফেরাউনের মতো এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আল্লাহ যেভাবে ফেরাউনদের অতীতে বিদায় দিয়েছেন, এ দেশেও ফ্যাসিবাদের ধারক-হক যারা ছিলেন, তারা অপমানজনকভাবে বিদায় নিয়েছেন। এমনকি যাওয়ার সময় নিজের সহকর্মীদেরও বলে যেতে পারেননি যে আমি অমুক জায়গায় চলে যাচ্ছি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে জনগণ হাসিনাকেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র-জনতার জীবন, ৩০ হাজার আহতের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। আমরা তাদের কাছে দায়বদ্ধ। নতুন বাংলাদেশ হবে পূর্ণ স্বাধীন। এখানে জনগণের অধিকার থাকবে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি হবে, সঠিক বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত হবে, এ দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হবে না।
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, গত ১৬ বছর আমাদের ভোটাধিকার ছিল না, গণতন্ত্র ছিল না, আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জণগণকে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। বিএনপি ও জামায়াত যেভাবে গত ১৬ বছর নির্যাতন সহ্য করে আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনাকে উৎখাত করেছে, সেভাবেই সামনে যেকোনো জাতীয় ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।
তিনি বলেন, কোরআন ও সুন্নাহর আইন ছাড়া, মানব রচিত সংবিধান মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। এতেই জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
ইউনিয়ন আমির মাওলানা মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, ছাত্রশিবিরের সাবেক বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক শিক্ষাবিদ ড. একরাম উদ্দিন সুমন।
সেক্রেটারি মো. মঈন উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান ও গাজী সাইফুল্লাহ, সহকারী সেক্রেটারি ফরহাদ আলী মাহমুদ, ছাত্রশিবির সভাপতি ছামিদুল হাসান লিমন, উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ মাহমুদ, জামায়াত নেতা হাফেজ আবু বক্কর সিদ্দিক, শিক্ষক মো. মঈন উদ্দিন, হাবিবুর রহমান সরদার, নাছির উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ, উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল, মাস্টার শাইখুল ইসলাম, ছাত্রশিবির সভাপতি শামিদুল হাসান লিমন, শিক্ষক মাওলানা আব্দুল আজিজ, পরিমল হালদার প্রমুখ।
মোহাম্মদ মিলন/এসএসএইচ