দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও অযত্ন অবহেলায় ধুঁকছে রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র জেলা স্টেডিয়ামটি। সংস্কারের অভাবে স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও মাঠের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, গ্যালারিতে ফাঁটলসহ বনভূমিতে পরিণত হয়েছে স্টেডিয়ামটি।

বছরের পর বছর স্টেডিয়ামটির এমন বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকেরা। স্টেডিয়ামটি সঠিকভাবে সংস্কার করে সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে জেলার ক্রীড়া প্রেমীরা।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে রাজবাড়ী জেলার প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ১৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় রাজবাড়ী জেলা স্টেডিয়ামটি। এক সময় জেলার ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র ছিল স্টেডিয়ামটি। বর্তমানে অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে স্টেডিয়ামটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। আজ পর্যন্ত স্টেডিয়ামের জায়গার বকেয়াসহ পৌর ভূমি উন্নয়ন কর বাকি রয়েছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭৫৭ টাকা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় পরিশোধের জন্য বরাদ্দ চেয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত ৩১ জুলাই বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ৩৭ হাজার ৬২৮ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

সরেজমিনে জেলা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের ভেতর বড় বড় ঘাস হয়েছে। স্থানীয় লোকেরা গোখাদ্যের জন্য ঘাস কাটছে। চারপাশের গ্যালারি ভাঙাচোরা ও শ্যাওলা পড়ে নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জমে যায় পানি, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিংরুম, স্যানিটেশন ও আলোর ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলোর অবস্থা নাজুক। ফলে স্থানীয় খেলোয়াড়রা নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছেন না।

জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। স্টেডিয়ামের গ্যালারির আসন ভেঙে পড়েছে, ফলে দর্শনার্থীরা নিরাপদে বসতে পারছেন না। প্রতিভাবনা তরুণেররা সঠিক পরিবেশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন।

এদিকে গত ২৪ আগস্ট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জেলা স্টেডিয়ামটি সংস্কার ও মাঠে পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ প্রদানের জন্য মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে স্টেডিয়ামে অনুশীলন করা খেলোয়াড়রা।

স্টেডিয়ামের খেলোয়াড়রা বলেন, জেলা স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠের ঘাস অনেক বড় হয়ে গেছে যার জন্য খেলাধুলা করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ যার জন্য পানি জমে থাকে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মাঠে খেলতে আসা খেলোয়াড়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।


তাই অনতিবিলম্বে জেলা স্টেডিয়াম সংস্কার করে জাতীয় মানের স্টেডিয়াম তৈরি করা হোক এবং স্টেডিয়ামে আমাদের খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, আমাদের রাজবাড়ীতে একটা মাত্রই স্টেডিয়াম রয়েছে।এখানে খেলাধুলা হয় না। স্টেডিয়ামের বর্তমান যে পরিস্থিতি খেলাধুলার পরিবেশ নেই। বড় বড় ঘাস, কাদা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাচ্চারা এসে যে খেলবে কিংবা কোনো খেলার আয়োজন হবে সেই পরিস্থিতি নেই। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সুদৃষ্টি নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিলে স্টেডিয়ামটির আবার প্রাণ ফিরে পাবে। 

জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য মিরাজুল মাজিদ তূর্য বলেন, আগের ক্রীড়া সংস্থায় আগে যারা ছিল তাদের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে প্রতি বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থার জন্য সাড়ে ৮ লাখ টাকা থেকে ৯ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ আসে। যে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল, সংস্কার, স্টাফদের বেতনসহ খেলাধুলার জন্য যে-সব বিশেষ প্রয়োজন পড়বে সেই খরচগুলো চালানো হতো। বিগত এত গুলো বছরে এই পরিমাণ টাকা আসার পরেও কেনো স্টেডিয়ামের উন্নয়নমূলক কাজ হলো না, সেই টাকা গুলো কোথায়, কোথায় ব্যয় হয়েছে আমরা সেই নথিপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করছি।

রাজবাড়ী জেলা ক্রীড়া অফিসার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আহমেদ বলেন, জেলা স্টেডিয়ামের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো উত্তরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। স্টেডিয়ামের বেশ কিছু দোকানের ভাড়া বকেয়া ছিল। আমরা সেই বকেয়া ভাড়া গুলো আদায় করেছি। স্টেডিয়ামের পুরাতন বিল্ডিংয়ের পাশে থাকা টয়লেটটা দীর্ঘদিন অকেজো ছিল, আমরা রিপেয়ার করেছি। এ বছর অতিমাত্রায় বর্ষণের কারণে স্টেডিয়ামের মধ্যে বড় বড় ঘাস জন্মেছে। আমাদের ঘাস কাটার মেশিনও রিপেয়ার করেছি। খুব দ্রুত মাঠের ঘাসগুলো পরিষ্কার করা হবে। এছাড়া নতুন একটি মেশিন ক্রয়ের জন্য আমার উদ্যোগ নিয়েছি এবং বিসিবি বরাবর আমরা একটা চিঠি দিয়েছি।

স্টেডিয়ামের সব সমস্যা সমাধানে ও খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান, জেলা ক্রীড়া অফিসার। জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সভাপতি সুলতানা আক্তার স্টেডিয়ামের সব সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।

মীর সামসুজ্জামান/আরকে