করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের দেওয়া দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন চলে ২৫ মে রাত ১২টা থেকে ৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত। পরে কঠোর লকডাউন শিথিল করে ১১টি বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা প্রশাসন। ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শেষে এর সুফল মিলেছে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। 

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের সময়ে জিন এক্সপার্ট, আরটিপিসিআর ও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন মিলে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৪০-৭০ শতাংশ। যা সারাদেশের করোনা সংক্রমণের হারের তুলনায় উদ্বেগজনক বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে কঠোর লকডাউন শেষে এখন চলমান বিশেষ বিধিনিষেধের সময়ে গত ৭ দিনে করোনা সংক্রমণের হার ১০-২০ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের গড় হার ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। 

জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, কঠোর লকডাউন সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ফল হিসেবেই কমেছে সংক্রমণের হার। কারণ জেলাজুড়ে কঠোর লকডাউন চলাকালীন ১৪ দিনে বাইরের জেলা থেকে প্রবেশে নিষেধ ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকাদের ঘরে থাকতে হয়েছে। দোকানপাট, শপিংমল ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণেই কমেছে সংক্রমণ। এছাড়াও ২৭টি পয়েন্টে চেকপোস্ট ও অর্ধশতাধিক তল্লাশি চৌকি বসিয়ে পরিবহন বন্ধ ও মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিতে কাজ করে জেলা পুলিশ।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের হার ১১.৭২ শতাংশ। এসময় আরটিপিসিআরে ২২ শতাংশ ও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেনে ৮.৪১ শতাংশ। গত ১৩ জুন জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৯.৪৩ শতাংশ। তার আগের দিন ১২ জুন তা ছিল ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তার জেলায় সংক্রমণের হার ‍ছিল ১১ জুন ১১.২৬ শতাংশ, ১০ জুন ১৩.৫১ শতাংশ, ৯ জুন ১৯.১৯ শতাংশ ও ৮ জুন ১৬.১৬ শতাংশ। 

জেলা সিভিল সার্জন জানান, গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার কমলেও জেলায় মৃত্যুহার কমেনি। সংক্রমণ বাড়তে বা কমতে পারে। সেটা মূল বিষয় নয়। শতভাগ মাস্ক পরাই হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। তবে, এখনও জেলার করোনা পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানান সিভিল সার্জন। অন্যথায় আবারও জেলার অবস্থা আশংকাজনক হারে বাড়তে পারে করোনা।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে জেলার সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪১৮টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে ৪৯ জনের। এর মধ্যে ল্যাবে ৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের পজিটিভ এসেছে। র‌্যাপিড টেস্টে এসেছে ৩১২টি তে ২৭ জন পজিটিভ। জিনেক্স টেস্টে ৭ জনের সবগুলোই নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। 

সিভিল সার্জন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ২১৭জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮১০ জন। প্রাণহানি ঘটেছে ৭৭ জনের। জেলায় করোনায় চিকিৎসাধীন মোট রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৩৪৩ জন। সদর হাসপাতালে ৭২টি বেডের বিপরীতে সোমবার সকাল পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে ৭১ জন।

ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কারণেই জেলায় সংক্রমণের হার কমেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তা যেকোনো সময় বাড়তে পারে। তাই মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। তাই কঠোর লকডাউন শেষ হলেও স্বাস্থ্য মানতে হবে ও সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। 

জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ ঢাকা পোস্টকে জানান, কঠোর লকডাউন সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় সংক্রমণের হার কমেছে। গত এক সপ্তাহে পার্শ্ববর্তী জেলা রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে সংক্রমণ বাড়লেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে ও মাস্ক পরিধান করলে সংক্রমণের হার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে শুরু থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলাকালে ৯১৪টি মামলা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে এসব মামলায় ৯১৪ জনের কাছ থেকে মোট ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে জেলা প্রশাসনের ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম/ওএফ