সুন্দরবনের কোলঘেঁষা বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও চিকিৎসকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। জরাজীর্ণ ভবনের দেয়াল ও ছাদ খসে পড়ছে, বৃষ্টির পানি চুইয়ে ভিজে নষ্ট হচ্ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এছাড়াও পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় সঠিক চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অধিকাংশ রোগীকে খুলনাসহ দেশের অন্যান্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে ৩১ শয্যার শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১১ সালে আরও ১৯ শয্যার একটি ভবন নির্মাণ করে মোট ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি। অথচ বর্তমানে সেখানে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। অনুমোদিত ১৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১১ জন কনসালটেন্ট আজ পর্যন্ত কোনোদিনও যোগদান করেননি। আবার কর্মরত চারজন ডাক্তারের মধ্যে দুজন রয়েছেন ট্রেনিংয়ে। ফলে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালের পলেস্তারা খসে পড়া ও ভবনের দেয়ালে ফাটলের কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রোগীদের প্রতিদিন এই ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চিকিৎসা নিতে আসা পূর্ণিমা রানী বলেন, হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার জন্য এসেছি। এসে দেখি কক্ষে ফ্যান নেই, বালিশ নেই, বেড কভার নেই, ভবনের পলেস্তারা খুলে খুলে পড়ছে, বাথরুম ভালো না। তারপর ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। ওষুধও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। সুস্থ হতে এসে মনে হচ্ছে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

আরেক রোগী শায়লা আক্তার বলেন, আমি যে রোগের জন্য এসেছি, সেই রোগের কোনো ডাক্তার এখানে নেই। আমি গরিব মানুষ দূরে গিয়ে চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই। তাই এখানে আসি।

রোগী সেলিনা সুলতানা বলেন, আমি চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে এসেছি। এসে দেখি এখানে চর্মরোগের ডাক্তার নেই। গাইনির ডাক্তারও নেই। যাদের সামর্থ্য আছে তারা খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ আমাদের সে সুযোগও নেই।

রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা আল-আমীন খান বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় আমরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থাও সবসময় রোগীদের আতঙ্কে রাখছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের দাবি জানাই।

শরণখোলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন মিলন বলেন, শরণখোলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে রয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনে চিকিৎসা নেওয়া মানেই জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ না হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আর ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন ৮০ জন রোগী, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। ভবন ও জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। অনেক সময় রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে হয়। এখানে নতুন ভবন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ খুবই জরুরি।

শেখ আবু তালেব/এআরবি