‘গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবীদের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন জরুরি’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবীদের ভূমিকা, আত্মত্যাগ এবং প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবীদের ভূমিকা, তাদের আত্মত্যাগ এবং প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন করতে হবে এবং এটা জরুরি। ইতিহাসে এমন কিছু মূহূর্ত আসে, যা শুধু সেই সময়ের সমাজকে নয়, পুরো জাতির চেতনায় স্থায়ী ছাপ ফেলে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই অভ্যুত্থান ও শ্রমজীবীদের হিস্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এই জনপদের একটি যুগান্তকারী ঘটনা। দীর্ঘ ১৫ বছরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। ছাত্র-জনতার রক্ত ঝড়া সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয় না। যদিও তাৎক্ষণিক ফলাফল অনেক সময় আশাব্যঞ্জক হয় না।
বিজ্ঞাপন
শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক, সাংবাদিক রঞ্জন দে।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ভুলে যাচ্ছে এবং পুরনো শোষণমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে শ্রমিক শোষণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করছে। শ্রমিকরা রাজনৈতিকভাবে অর্জিত বিজয়ের অংশীদার হলেও তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক হিস্যা অনিশ্চিত।
সভার সভাপতি অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাফল্যের পর শ্রমিক সংগঠনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার, ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহার, বকেয়া পরিশোধ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, বন্ধ কলকারখানা চালু, গ্রামীণ রেশনিং ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি উত্থাপন করেছিল। কিন্তু সরকার শ্রমিকদের দাবির বাস্তবায়নের পরিবর্তে পুরনো কায়দায় দমনপীড়নের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া, আলোচনায় বক্তব্য দেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ তাহির জামান প্রিয়র বাবা মোস্তফা জামান, শহীদ মোসলেম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার, শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের মা ময়না বেগম, শহীদ মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন, সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদ রংপুরের সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী ডলার, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এর সদস্য সবুজ রায়, রেদোয়ান ফেরদৌস, কৃষক সংগঠক আব্দুস সাত্তার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যুগেশ ত্রিপুরা প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বীথি দাস নন্দিনী। সভা সঞ্চালনা করেন আহসান আহমেদ।
আলোচকবৃন্দ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা এবং শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের শোষণ-বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে