নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় মানবপাচারকারী সন্দেহে চীনা নাগরিকসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) হাফিজুল ইসলাম। 

আটককৃতরা হলেন- চীনের নাগরিক লি উই হাও  (৩০) এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার সুখদেব পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল হানিফ মিয়ার ছেলে মো. ফরিদুল ইসলাম (৩২)।

তাদের আটককালে তিন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- কেন্দুয়া থানার পৌরসভা এলাকার কমলপুর গ্রামের রুবেল মিয়ার মেয়ে আলফা আক্তার (১৮), জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার গোপী নদী গ্রামের মৃত বছির উদ্দিনের মেয়ে বৃষ্টি আক্তার (১৭), কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের গগডা গ্রামের মহর উদ্দিনের মেয়ে লিজা আক্তার (২০)।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর কেন্দুয়া পৌরসভাস্থ কমলপুর গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী আলফা আক্তারকে বিয়ে করেন চীনা নাগরিক লি উই হাও। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর চায়নার ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে তিনি রওনা করবেন। আলফা আক্তারকে বিয়ে করা ও তাকে চায়না নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পরিবারের লোকজনকে এক লাখ টাকা প্রদানের বিষয়ে মৌখিকভাবে লি উই হাও আশ্বস্ত করেন।

আলফা আক্তারকে চায়নায় নিয়ে চলে যাবে- এ কারণে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) আলফা তার পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করানোর জন্য চায়না নাগরিক স্বামীকে কেন্দুয়ার কমলপুর গ্রামে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন ফরিদুল ইসলাম নামে বাংলাদেশি একজন নাগরিক ও আরও দুইজন মেয়ে। যাদের মধ্যে জামালপুরের বৃষ্টির সাথে রোববার অন্য আরেকজন চায়না নাগরিকের বিয়ে হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এ ছাড়াও আরেকজন মেয়ে সাথে ছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আলফা আক্তারের পরিবারের লোকজন চীনা নাগরিকের সাথে কথা বলার সময় তার কাছে পাসপোর্ট নম্বর ও বাংলাদেশে অবস্থান করার বৈধ ডকুমেন্টস দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তাছাড়া তাদের সহযোগী বাংলাদেশি নাগরিক কোনো সন্তোষজনক উত্তর ও বৈধ কোনো ডকুমেন্টস না দেখাতে পারায় আলফা আক্তারের পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয়। তাদেরকে অবরুদ্ধ রেখে কেন্দুয়া থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি সহযোগী ফরিদুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় তাদেরকে আটক করে কেন্দুয়া থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে।

ভুক্তভোগী আলফা আক্তার বলেন, আমাদের পরিচিত এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল এক চাইনিজ ব্যক্তির সাথে। ওই বিয়ের সময় আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। তখন সবাই একজনের সাথে আরেকজন পরিচিত হই। তখন এই ছেলেটি আমাকে পছন্দ করে, আমিও ছেলেটিকে পছন্দ করি। পরবর্তীতে তারা বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হই। তারা আমাদের পাসপোর্ট তৈরি করে একটি অফিসে নিয়ে যায়। সেই অফিসে যাওয়ার পর সেখানে স্বাক্ষর করার পর তারা আমাকে জানায় আমাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়ে গেছে। তারপর আমি বললাম, তাহলে এখন আমি আমাদের বাড়িতে যাব সবার সাথে দেখা করতে। এ কথা বলে তাদের আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার সাথে আমার এক কাজিন ও এক বান্ধবী থাকতো, তাদেরকেও সাথে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আসার পর আমি আমার এক আন্টিকে তাদের সব কাগজপত্র চেক করতে বলি। আন্টি কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে জানায় এগুলো সব ভুয়া কাগজপত্র। তারপর আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেই। তারা যদি সত্যিই আমাদের বিক্রি করার উদ্দেশ্যে এসব করে থাকে তাহলে, আমরা এর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। কারণ তারা আমাদেরকে টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে চীনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) হাফিজুল ইসলাম। 

চয়ন দেবনাথ মুন্না/আরএআর