এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১২৪ জন গ্রামপুলিশের বেতন-ভাতা। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে ওই গ্রামপুলিশদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
 
সরেজমিনে কয়েকজন গ্রামপুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তারা তাদের নানা দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ সদস্য নল্লা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কদ্দুস বলেন, আমরা বেতন-ভাতা পাই সামান্য। এতেই আমরার সংসার চলে। কিন্তু এক বছর ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে খুব কষ্টে আছি। ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। সরকারের কাছে জরুরিভাবে আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য অনুরোধ করছি।

উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য তাসলিমা আকন্দ বলেন, আমরা ছোট কর্মচারী। তাই আমাদের বেতন-ভাতা নিয়ে অবহেলা করা হয়। আমরার যদি এক বছরের বেতন-ভাতা ও দুই বছরের হাজিরা ভাতা বন্ধ থাকে, তাইলে কেমনে বাঁচি? আমাদের তো সন্তান আছে। সংসার আছে। সন্তানকে লালন-পালন করতে হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (স্থানীয় সরকার বিভাগ) বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। তিনি হাটবাজারের ইজারা লব্দ আয়ের অবশিষ্ট ৪১ শতাংশ অর্থ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কর্মচারীদের ইউপি অংশের বেতন-ভাতা পরিশোধের অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন।

জেলা প্রশাসক তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ইউপি সচিবদের বকেয়া ৫ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৫ টাকা এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ৮ লাখ ১০ হাজার ৯৯৪ টাকাসহ মোট ১৪ লাখ ২ হাজার ৪২৮ টাকা এবং গ্রাম পুলিশদের বকেয়া জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা করে ১১ মাসের বকেয়া ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, ইউপি সচিব ও গ্রাম পুলিশদের বকেয়া সাকল্যে ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৮ টাকা হাটবাজারের ইজারা লব্দ আয়ের ৪১ শতাংশ অর্থ থেকে পরিশোধের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদনের জন্য কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের সভায়ও সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মন্ত্রণালয়ে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের বেতন-ভাতার ফাইল আটকে রয়েছে।
 
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মইন উদ্দিন খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউপি সচিব ও গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা (ইউপি অংশ) দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ