মাগুরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক এমবি বাকের হোসেনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মহম্মদপুরে নিহত দুই ছাত্র শহীদ আহাদ ও সুমন হত্যা মামলার একাধিক আসামিকে জামিন প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে দলীয় প্যাডে প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমবি বাকের হোসেনের দলীয় পদ থেকে অপসারণ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জুলাই যোদ্ধা পরিবার।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মহম্মদপুর প্রেসক্লাবে ‌জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ-আহত পরিবার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য জানানো হয়, মাগুরা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক এমবি বাকের হোসেন মহম্মদপুরে জুলাই আন্দোলনে আহাদ-সুমন হত্যা মামলার আসামিদের জামিন প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে নিজ দলের কর্মী হিসেবে দলীয় প্যাড ব্যবহার করে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। 
 যে কারণে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন আসামি জামিনে মুক্তি পান। যারা পলাশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পদে রয়েছেন। এটা শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বেইমানি। এ ঘটনায় জেলা জামায়াতের আমিরের অপসারণের দাবি জানান তারা।

হত্যা মামলার আসামীদের জামিনের জন্য প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া ওই ঘটনায় স্থানীয় সাধারণ জনতার মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শহীদ সুমনের মা বলেন, আমার সন্তান সুমন হত্যার বিচার আজও পেলাম না। অথচ জামায়াতের আমির আসামিদের মামলা থেকে জামিন পেতে নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছে। যেটা আমার সন্তানের লাশের সঙ্গে বেইমানি। আমি তার অপসারণ চাই।

জানা যায়, গত বছরে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে মহম্মদপুরে দুই জন ছাত্র আহাদ-সুমন শহীদ হন। তাদের পরিবারের থেকে করা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদ্দীনসহ সোহেল রানাকে নিজেদের কর্মী দাবি করে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর প্যাডে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেছেন মাগুরা জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির এমবি বাকের হোসেন। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত মাগুরা-২ আসনের প্রার্থী। প্রত্যয়ন পত্রে তিনি লিখেন, আসামিরা  আমাদের সাংগঠনিক পরিবারের একজন সদস্য। আমার জানা মতে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি ইসলামী শরীয়ত পালন করে চলেন এবং তাদের পরিবার ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকারবদ্ধ। এমন প্রত্যয়ন প্রদানের বিষয়টি জানাজানি হলে চারিদিকে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।

মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মৈমুর আলী মৃধা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর মাগুরা জেলার আমির বাকের হোসেন  ফ্যাসিস্টদের এবং আহাদ-সুমন হত্যা মামলার আসামিদের জামিনের সহায়তা করতে দলীয় প্যাডে নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রত্যয়ন দিয়েছে জানতে পেরেছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

মাগুরা জেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির এমবি বাকের হোসেন শুক্রবার সকালে ঢাকা পোস্টেকে বলেন, আমার নিকট অনেকেই প্রত্যয়ন নিতে আসে। তিন মাস আগে পরিবারের পক্ষ থেকে চাকরির জন্য তাদের তথ্য গোপন করে প্রত্যয়ন পত্র নিয়েছে। আমি জানতাম না ওরা আহাদ-সুমন হত্যা মামলার আসামি।

তাছিন জামান/আরকে