তিস্তার বুক এখন চিরসবুজ

তিস্তার রুপালি বালুচর ঢেকে গেছে সবুজ পাতায়। দুই মাস আগেও যে নদীতে ছিল অথই পানি, মানুষের চোখেমুখে ছিল বিষণ্নতার ছাপ, সেই নদীর বুকে এখন সবুজের বিপ্লব। তিস্তা এখন আর নদী নেই, যেন বিস্তীর্ণ বালুচর। আর সেখানেই আগামীর স্বপ্ন বুনছেন নদীপারের মানুষ। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় চার কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হবে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় জেগে ওঠা ১৩টি চর থেকে।

উত্তরের জীবনরেখা তিস্তায় জেগে উঠেছে চর, ফসলে ফসলে ভরে গেছে বালুময় প্রান্তর। কৃষকরা চাষ করছেন আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজসহ ১০ ধরনের ফসল। বানের পানিতে সম্বল হারানো মানুষগুলো এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফসল উৎপাদনে।

তিস্তায় এখন এক হাঁটু পানিও নেই। হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসে বালু। এ কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জমিতে ফসল ফলানো হয়। ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। তবে সেচ পেতে নিদারুন কষ্ট পেতে হয় আমাদের।

ফরিদুল ইসলাম, কৃষক

ডিমলা উপজেলার চরখরিবাড়ী ইউনিয়নের তালুকদারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন জানান, শুষ্ক মৌসুমে আলু আর ভুট্টা চাষ করেই সারা বছরের সংসারের প্রায় সব চাহিদা মেটাতে হয়। প্রতিবছরের বন্যায় দু-একবার বাড়ি ভেঙে গেলে বসবাস করতে হয় গাইড বাঁধে। এই বন্যার বাড়িঘর, ধান-চাল কিছুই নিয়ে যেতে পারি নাই। এখন এই ফসলেই ভরসা।

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ী চর গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, তিস্তায় এখন এক হাঁটু পানিও নেই। হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসে বালু। এ কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জমিতে ফসল ফলানো হয়। ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। তবে সেচ পেতে নিদারুন কষ্ট পেতে হয় আমাদের।

তিস্তার বুকে ফসলের সমারোহ

পার্শ্ববর্তী ফরেস্টের চর গ্রামের কৃষক নয়ন রায় জানান, গত বন্যায় আমার ৩ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে, শেষ সম্বল ২ বিঘা জমিতে এবার পেঁয়াজ লাগিয়েছি। আশা করি ফলন ভালো হবে। তবে এখান থেকে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না, ফলে লাভ তুলনামূলক কম হয়।

সেকেন্দার আলী আরও জানান, ফসল উৎপাদনে নানা সমস্যায় আমাদের মাঠকর্মীরা কৃষকদের সব সময় সহোযোগিতা করছেন। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সার্বিকভাবে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে  থাকবে।

ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীর ১৩টি চরে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ প্রায় ১০ ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে এই চরগুলোয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আলু ও মরিচ চাষ হচ্ছে। এই চরগুলোতে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য চাষ হচ্ছে, তার পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা।

সেকেন্দার আলী, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ডিমলা

ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুর রহমান জানান, এই ইউনিয়নের ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ী, ফরেস্টের চরের মানুষের জীবন দুঃখ-দুর্দশায় ভরা। বছরে দুই-তিনবার বন্যার পানিতে সব শেষ হয় আর শুষ্ক মৌসুমে একবার চাষাবাদ করেই সারা বছর চলতে হয় তাদের। সেচ সরবরাহ ও পরিবহনসুবিধা ভালো থাকলে কৃষকরা আশানুরূপ লাভবান হতেন।

নীলফামারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ডিমলা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ প্রতিবারের মতো গত বছর দুবার অতিবন্যায় তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে। যদি বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, তবে সারা বছর এই জমিগুলো ব্যবহার করা যেত। নদী চরাঞ্চলের মানুষগুলোর দুঃখ ঘুচে যেত।

ডিমলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীর ১৩টি চরে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ প্রায় ১০ ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে এই চরগুলোয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আলু ও মরিচ চাষ হচ্ছে। এই চরগুলোতে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য চাষ হচ্ছে, তার পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা।

এনএ