এক পরিবারের ৩ জনের বিসিএস জয়
‘বাবার ইচ্ছা ছিল ২ ভাইয়ের মধ্যে অন্তত একজন যেন চিকিৎসক হই’
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের সমাধীনগর গ্রামের এক পরিবারে একসঙ্গে তিনজন ৪৮তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তারা হলেন—ডা. শিবাজী প্রসাদ বিশ্বাস, তার ছোট ভাই ডা. গৌরব বিশ্বাস এবং শিবাজীর স্ত্রী ডা. ইন্দ্রানী সাহা। তাদের এই কৃতিত্বে পরিবার ও এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে।
বিজ্ঞাপন
শিবাজী ও গৌরব প্রয়াত বিনয় কৃঞ্চ বিশ্বাস ও নীলিমা রানী বিশ্বাসের সন্তান। তাদের বাবা সমাধীনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যামন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং মা সাধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অন্যদিকে ইন্দ্রানী সাহা শিবাজীর স্ত্রী। তিনি বরিশালের অজয় সাহা ও লিপিকা সাহার মেয়ে।
জানা গেছে, শিবাজী প্রসাদ বিশ্বাস ২০১২ সালে সমাধীনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যামন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে। বর্তমান শিবাজী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস (মেডিসিন) পার্ট-২ কোর্স করছেন।
বিজ্ঞাপন
তার ছোট ভাই গৌরব বিশ্বাস ২০১৪ সালে সমাধীনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যামন্দির মাধ্যমিক বিদ্যলয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে দ্বারিয়াপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। বর্তমান গৌরব বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি (ইন্টারনাল মেডিসিন) কোর্স করছেন রেসিডেন্ট হিসেবে।
শিবানী প্রাসাদের স্ত্রী ইন্দ্রানী সাহা ২০১৫ সালে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্রগাম মেডিকেল কলেজে। বর্তমান ইন্দ্রানী সাহা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস (গাইনি ও অবস) পার্ট-২ কোর্স করছেন।
স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত শিবানী প্রসাদ বলেন, আমার বাবার খুব ইচ্ছা ছিল আমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে অন্তত একজন হলেও যেন চিকিৎসক হই। দেশের মানুষের সেবায় যেন আমরা নিবেদিত থাকি। আমার বাবা মারা যান ২০১৪ সালে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়ি। আমাদের মা তখন আমাদের আগলে রাখেন। বাবার ইচ্ছার কথা স্মরণে রেখে আমরা দুই ভাই সেই লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকি। এক পর্যায়ে দুই ভাই আমরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাই। আমরা দুই ভাই একসঙ্গে এমবিবিএস পাশ করি। পরে ৪৮তম বিসিএস পরীক্ষা দিই। আমার স্ত্রীও এমবিবিএস শেষ করে ৪৮তম বিসিএস দেয়। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আমরা তিনজনই স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। দেশের মানুষের সেবায় আমরা নিজেদেরকে সব সময় নিয়োজিত রাখব।
প্রতিবেশী অমিয় প্রসাদ রায় বলেন, একই পরিবারের তিনজন ৪৮তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় শুধু পরিবার নয়, পুরো এলাকাই আনন্দে উচ্ছ্বসিত।
স্বাস্থ্য ক্যডারে সুপারিশপ্রাপ্ত তিনজনের মা নীলিমা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার দুই ছেলে ও বড় ছেলের স্ত্রী, তিনজনই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের এই অর্জনে আমি খুবই খুশি। আজ ওদের বাবা বেঁচে থাকলে খুবই খুশি হতেন। আমি আমার দুই ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর জন্য সবার কাছে আর্শীবাদ কামনা করছি। তারা যেন মানুষের সেবায় নিয়জিত থাকতে পারে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে