শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হওয়ায় শেরপুরের আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কমেছে সব নদ-নদীর পানি, ভেসে উঠতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে নামতে শুরু করলেও রাতে ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নালিতাবাড়ীর বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় প্রবেশ করে। তবে মধ্যরাতের পর তা আবারও কমে গিয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে দুটি নদীর পানি ফুলে ফেঁপে ওঠে। মহারশি নদীর প্রবল স্রোতে বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে অন্তত ১১টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ভেসে যায় অসংখ্য মাছের ঘের। পানির নিচে তলিয়ে ছিল দুই উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর রোপা আমনের জমি।
বিজ্ঞাপন
পানি কমতে শুরু করায় বর্তমানে ৮৭২ হেক্টর জমি পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। এ পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলের ঘটনায় দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় ও খৈলকুড়া এলাকার ঘরহারা পরিবারগুলো পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। ভিটেমাটি ও ঘরবাড়ি হারানো মানুষজন অস্থায়ীভাবে সেখানে অবস্থান করছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন, এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে শুধু ১০ কেজি চাল এবং কিছু শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িঘর ও কৃষিজমির বিশাল ক্ষতির তুলনায় এই সহায়তা সামান্য, যা তাদের জীবিকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালের পাহাড়ি ঢলে ব্রিজপাড় এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেলেও তা সংস্কার করা হয়নি। তাই এ বছরও একই জায়গায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জেলায় প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ি ঢলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর রোপা আমনের জমি পানির নিচে ডুবে গিয়েছিল। এখন পানি কমতে শুরু করায় ৮৭২ হেক্টর রোপা আমনের জমি নিমজ্জিত রয়েছে। আশা করা হচ্ছে পানি দ্রুত নেমে গেলে বাকিগুলোও ভেসে উঠবে। যেসব কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন, তাদেরকে প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালের তথ্য মতে, বর্তমানে শেরপুরের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর ভাঙনরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাইমুর রহমান তালুকদার/আরএআর