বার্ড ফ্লু রোগ প্রতিরোধে একটি মুরগিকে তিন ডোজ টিকা দিতে হয়। প্রথম ডোজ বাচ্চার বয়স ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে, দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ২৮ দিনে। আর শেষ ডোজ ৬ মাস বয়স হলে দিতে হয়। মুরগির দেহে প্রয়োগের জন্য টিকাটি প্যাটেন্ট, উৎপাদন ও বিপণন করছে এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের উদ্ভাবিত ‘বাংলা বার্ড ফ্লু এইচ৯ ভ্যাক’ নামের টিকাটি উৎপাদন ও বিপণনের জন্য ইতোমধ্যে ওষুধ প্রাশাসন অনুমোদন দিয়েছে।

বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু রোগের টিকা তৈরি হচ্ছে ঝিনাইদহে। এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস নামে এই প্রতিষ্ঠানটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৫নং কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের রাউতাইল এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক মো. আলিমুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে কোহিনুর পারভীন, মোস্তফা কামাল ও আয়নুল হক তিন বছর আগে থেকে গবেষণা করে টিকাটি উদ্ভাবন করেছেন। টিকাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলা বার্ড ফ্লু এইচ৯ ভ্যাক’। 

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, এখানকার ১৫ জন উৎপাদন কর্মকর্তা এ গবেষণায় সহায়তা করেছেন। আলিমুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটিতে উপদেষ্টা গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। বাকি তিনজন প্রতিষ্ঠানেরই গবেষক। বার্ড ফ্লু রোগ প্রতিরোধে ইতোপূর্বে এই টিকা বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে। এখন দেশেই পাওয়া যাবে এই টিকা, খরচও হবে কম।

প্রতিষ্ঠানটির আরএন্ডডি এবং কিউসি (জৈবিক ইউনিট) অ্যানিমাল হেলথকারি বিভাগের ম্যানেজার ডা. মোছা. কহিনুর পারভিন ঢাকা পোস্টকে জানান, বার্ড ফ্লু রোগের একটি মুরগিকে তিন ডোজ টিকা দিতে হয়। প্রথম ডোজ বাচ্চার বয়স ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে, দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ২৮ দিনে। আর শেষ  ডোজ ৬ মাস বয়স হলে দিতে হয়। এই টিকাটি অনান্য টিকার থেকে অনেক ভালো হবে এবং খামারিরা উপকৃত হবেন।

এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের টিকা ইউনিটের প্রডাকশন ম্যানেজার ডা. মো. মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে জানান, বার্ড ফ্লু রোগটি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগ থেকে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত বাহির থেকে কিছু জরুরি টিকা আমদানি করা হচ্ছে। যার ফলে খামারিদের বেশি দাম দিয়ে টিকা ক্রয় করার ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাহির থেকে টিকা আনলে মূল্য অনেক বেশি পড়ে। প্রতি ডোজের দাম পড়ে ছয়-আট টাকা। কিন্তু তাদের উৎপাদিত প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে সাড়ে পাঁচ টাকা। এতে খরচ কম হবে খামারিদের। প্রতি বছর তাদের কারখানায় ১৫ কোটি টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মখলেছুল ইসলাম ঢাকা পোস্ট বলেন, ঝিনাইদহে অবস্থিত ফ্যাক্টরি থেকে মুরগির জন্য বার্ড ফ্লু টিকা তৈরি করতে পেরেছি। আমরাই প্রথম বাংলাদেশি আইসুলেট বা স্থানীয়ভাবে পৃথকীকৃত ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করতে পেরেছি এবং এই টিকার কার্যকারিতা ৯৪ শতাংশ, এটা পরীক্ষিত। বর্তমানে ফ্যাক্টারিতে ১২ থেকে ১৫ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে এই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারব। এটা আমাদের জন্য এবং বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া।

জানা গেছে, ২০০০ সালে ঝিনাইদহের রাউতাইল এলাকায় এফএনএফের কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ সাল থেকে তারা উৎপাদনে যায়। বিশেষ করে তারা প্রাণীর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। ২০১৭ সালে বার্ড ফ্লুর টিকা তৈরিতে সক্ষম হয়। এরপর এই টিকা উৎপাদনে কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তা দেখতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক  মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ১৭ ডিসেম্বর ঝিনাইদহে আসে। 

তারা কারখানা পরিদর্শন করেন এবং বার্ড ফ্লুর টিকা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকায় উৎপাদন এবং বাজারজাত করার অনুমতি দেন। গত ৫ মে কোম্পানিটি এই টিকা উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে। এরপর থেকে তারা উৎপাদন শুরু করে। গত সপ্তাহ থেকে বাজারজাত শুরু করেছে। প্রায় এক কোটি টিকা বাজারে ছাড়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার অধিকারী ঢাকা পোস্টকে জানান, আগে বার্ড ফ্লুর টিকা আমদানি করতে হতো। তবে বাংলাদেশে এই প্রথম এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস বার্ড ফ্লুর টিকা তৈরি করছে। এটা আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ইতিবাচক। এই টিকা দেশে উৎপাদন হওয়ায় খামারিদের জন্য সস্তা এবং সহজলভ্য হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর